মা-বাবার ব্যবহৃত কন্ডোম নিয়ে এ কী করল মেয়ে
প্রথমে, ডাক্তারকে অভিভাবকরা অন্তত তেমনই জানিয়েছিলেন। ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা থেকে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে তাঁরা এসেছিলেন জোকা ইএসআই হাসপাতালে। তিন বছরের শিশুর কান্না, ছটফটানি ক্রমশ বাড়ছিল। শেষমেশ চিকিৎসকরা আন্দাজ করেন, বাচ্চাটির পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। মা’কে জিজ্ঞাসা করা হয়, মেয়ে কী খেয়েছে?সঙ্কোচবশতই তখন আসল ঘটনাটা বলতে পারেননি তরুণী বধূ। ‘জানি না তো’ বলে এড়িয়ে যান। তাঁর হাবভাবে যে একটা অস্বস্তি মাখানো ছিল, তা চিকিৎসকদেরও চোখ এড়ায়নি। মেয়েটিকে পেডিয়্যাট্রিক বিভাগে আনা হয়। নানারকম চেষ্টা করেও বাচ্চার কান্না থামে না। ডাক্তারবাবুরা সন্দেহ করেন, কিছু একটা থেকে ‘ফুড পয়জনিং’ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোন জিনিস পেটে গিয়েছে, তা জানা একান্ত জরুরি। তাঁরা মা’কে পরিষ্কার বলেন, খোলাখুলি সব না জানলে চিকিৎসা সম্ভব নয়। মা বলেন, “হাতের কাছে যা পায়, তাই তো মুখে দেয়। সকালে তেমনই কী একটা মুখে দিয়েছিল।” কী দিয়েছিল? লজ্জা ত্যাগ করে তখন আসল রহস্য ফাঁস করেন মহিলা। বলেন, “একটা কন্ডোম। ইউজ করা।”
কন্ডোম! শুনে ডাক্তারবাবুদের চোখ কপালে। বাচ্চাদের মুখে পেনের ঢাকনা, আলপিন বা বোতলের ছিপি ঢুকে যাওয়ার ঘটনা বিরল নয়। অনেক সময় প্রাণসংশয়ও হয়। কিন্তু কন্ডোম? তাও আবার ব্যবহৃত কন্ডোম ঢুকে যাওয়াটা বেনজির বলে জানাচ্ছেন ডাক্তাররা। জোকা ইএসআইয়ের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান প্রীতম বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসা শুরু করেন।
শিশুটির মা জানান, সকালে অনেকক্ষণ ধরেই মুখে কিছু একটা দিয়ে চুষছিল সে। আচমকাই বাচ্চাটির মুখে হাত দিয়ে দেখা যায় রাবারের মতো কী একটা। মা মুখে হাত ঢুকিয়ে বের করে দেখেন ব্যবহার করা কন্ডোম। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কন্ডোমের যে চটচটে লুব্রিক্যান্ট থাকে, তা থুতুর সঙ্গে মিশে শিশুটির পেটে চলে গিয়েছিল। তা থেকেই পেটে ব্যথা শুরু হয়।
ওষুধ দিয়ে অবশ্য যন্ত্রণা থামানো গিয়েছে। শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন চিকিৎসকরা। তবে এও জানাচ্ছেন, জিনিসটা পেটে চলে গেলে বড় বিপদ হতে পারত। বৃত্তান্ত শুনে চিকিৎসক মহল বিস্মিত। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া, “বাচ্চার মুখে কন্ডোম! কস্মিনকালেও শুনিনি। এসমস্ত জিনিস ছোটদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
পেটে গেলে পাকস্থলী ফুটো পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।” অবাক এম আর বাঙুরের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সব্যসাচী রায়ও। তাঁর কথায়, “কন্ডোমের লুব্রিক্যান্টে সাইড এফেক্ট খুব একটা বেশি না হলেও, যা দিয়ে কন্ডোম তৈরি হয় সেই ল্যাটেক্সে অনেকেরই অ্যালার্জি থাকে। এই ধরনের জিনিস অনেকক্ষণ মুখে দিলে ছোট শিশুদের পেট ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক।”