যুগ যুগ ধরে চলছে আজব এক বিয়ের রীতি। যা পিলে চমকে যাওয়ার ঘটনাকেও হার মানায়। এমন বিয়েতে মিলে কাড়ি কাড়ি টাকাও। এশিয়ার চীন দেশে এ আজব বিয়ে প্রচলিত রয়েছে।

সুনয়না ‍বৃষ্টি

বিয়ের এ আজব রীতি মূলত মৃত ছেলে মেয়েদের জন্য। এ বিয়েতে মৃত মানুষের বিয়ে হয় আরেক মৃত মানুষের সঙ্গে। কখনও বা মৃতের সঙ্গে বিয়ে হয় জীবতের সঙ্গেও। এমন বিয়ের রীতির কথা শুনলেই অবাক হন বিশ্ববাসী।

পৃথিবীতে যত আজব রীতি রয়েছে তার মধ্যে এ রীতিকে অন্যতম বলা যায়। যুগ যুগ ধরে এ আজব প্রথা বা রীতি বিশ্বে ঘোস্ট ম্যারেজ বা ভূত বিয়ে নামে পরিচিতি পেয়েছে। কীভাবে শুরু হলো আজব এ বিয়ে? ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ বিয়ের প্রথম প্রচলন শুরু হয় চীনের সাং সাম্রাজ্য থেকে। ১৬০০-১০৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সর্বপ্রথম এ বিয়ে মিয়াং খুন বা 'মৃতের বিয়ে' নামে পরিচিত ছিল। ওই সাম্রাজ্যের সম্রাট চাও চাওয়ের ১২ বছরের পুত্রসন্তান হঠাৎ মারা গেলে একটি জীবিত মেয়ের সঙ্গে সম্রাট তার মৃত ছেলের বিয়ে দেয়। সেই থেকে চীন সমাজে এ বিয়ের প্রচলন এখনও চালু রয়েছে। মৃত ছেলে বা মেয়ের বিয়ের ধরণ এখন পর্যন্ত তিনভাবে এ বিয়ে হতে দেখা গেছে চীন দেশে। যেমন- ১। সাধারণত অবিবাহিত মৃত ছেলে বা মৃত মেয়ের পরিবারের সঙ্গে আপোসে বিয়ের আয়োজন করে পরিবার। মৃত বর কনের এ বিয়েতে খুশি হন তাদের পরিবার ও আমন্ত্রিত অতিথিরাও। ২। মৃত ছেলে বা মৃত মেয়ের জন্য কোনো মৃত মেয়ে বা মৃত ছেলের পরিবার না পাওয়া গেলে কবরস্থান থেকে মৃতদেহ চুরি করে বিয়ে দেয়া হয়। যে কারণে প্রায়ই চীন দেশে কবর স্থান থেকে মৃতদেহ চুরি হতে দেখা যায়। ৩। কখনও কখনও মৃত ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে জীবিত মেয়ে বা ছেলের বিয়ে দেয়া হয়। এ বিয়ের জন্য একটি ফাঁদ পাতে মৃতদের পরিবার। বিশেষ ফাঁদে বেশি পরিমাণে টাকা একটি লাল রঙের খামে ভরে সেই খাম রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়। এরপর আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে মৃতের সেই পাত্র পাত্রীর পরিবার। যদি কোনো অবিবাহিত মেয়ে বা ছেলে এ খাম তোলেন তবে জোর করে তার সঙ্গেই বিয়ে দেয়া হয় মৃত সে পাত্র বা পাত্রীকে। কেন এ বিয়ে দেয়া হয়? অবিবাহিত মৃত ছেলে বা মেয়ের পরিবার মনে করে এতে তাদের সন্তানের একজন সঙ্গী জোটে। তারা পরপারে একা থাকে না। বিয়ে দেয়া পাত্র পাত্রীর সঙ্গে সুখে থাকে। এ বিয়েতে তথ্য দিলেই টাকা! প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য এ ভূত বিয়ে। কালক্রমে বর্তমানে এ বিয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে লাখ লাখ টাকাও। মৃত মেয়ের পরিবারকে মৃত ছেলের পরিবারের খবর দিলে কিংবা মৃত ছেলের পরিবারকে মৃত মেয়ের পরিবারের খবর দিলে ওই ব্যক্তি পান মোটা অংকের নগদ অর্থ। মৃত দেহের সন্ধান দিলেও এ লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়। মৃত দেহ প্রসঙ্গে চীনের সাংশি হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, 'যখনই হাসপাতালে কোনো অবিবাহিত তরুণী মারা যান, তখনই ভূত বিয়ের জন্য তার মৃতদেহ নিলামে উঠে যায়। মৃত ছেলেদের পরিবার নিলাম যুদ্ধে লেগে পড়ে মেয়েটিকে পেতে।' বিয়ের জন্য মৃতদেহের দাম প্রসঙ্গে সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা বিভাগের প্রধান হুয়াং জিংচুন জানান, ছেলেদের চেয়ে অবিবাহিত মৃত মেয়ের হাড়ের দাম অনেক বেশি হয়। যদি সে মৃত মেয়ে অল্পবয়সী ও সুন্দরী হয়, সেই সঙ্গে বংশ ভালো হয় তবে মৃতদেহের দাম আরও বেড়ে যায়। সমীক্ষা বলছে, মৃত মেয়ের হাড় ছেলের পরিবার ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ইউয়ানে কিনে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে এ অর্থ ১ লাখ ইউয়ান পর্যন্ত যেতে পারে। কীভাবে হয় এ বিয়ে? বিয়ের জন্য পাত্র পাত্রী পাওয়া গেলেই ধর্মযাজকের সঙ্গে পরামর্শ করে এই ভূত বিয়ের তারিখ ঠিক করে বিয়ের আয়োজন করে পরিবাররা। কী হয় এ বিয়েতে? অন্য সব স্বাভাবিক বিয়ের মতোই অবিবাহিত মৃত ছেলে মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়। জমকালো আয়োজনে ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত থাকে পরিবার ও পরিচিত বন্ধু মহলের সবাই। সব রকমের ধর্মীয় আচার-আচরণ ও রীতি মেনে মৃতদের এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ বিয়ের প্রচলন শুধু চীন দেশেই নয়, আজব এ বিয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায় আফ্রিকাতেও।