একজনকেই পারেনা, জায়েজ বলে চার বিয়ে করে!
গায়ের চামড়া(রং) উঠায়ে আমাকে একদিন ফোন দিয়ে শুদ্ধ ভাষায় খবর দিলো-ম্যাডাম,ৱ্যাবের গাড়ি আমার গাড়িরে মেরে দিয়েছে!!তারপর গাড়ি থামিয়ে আমাকে “থাবর” মেরেছে!!আমি এখন কি করবো??আমি অতি ঠান্ডা গলায় তাকে বললাম- অত্যন্ত আনন্দের ঘটনা!!তুমি এখন নাচো,তারপর নাচ শেষ হলে তোমার স্যারের কাছে ফোন দিয়ে এই সুসংবাদ দাও!!তো মারসে কোন জায়গায়??
-গালে ম্যাডাম– তোমার কথা জিজ্ঞেস করিনাই,গাড়ির কোথায় লাগসে??-বাম পাশের হেডলাইট,আর দরজা ভচকায়ে গিয়েছে!!-ৱ্যাবের গাড়ি তোমার সামনে ছিল??– জ্বিআমি ততোধিক ঠান্ডা গলায় বললাম– ও তার মানে চলন্ত রাস্তায় ৱ্যাবের গাড়ি রিভার্স গিয়ার মেরে তোমার হেডলাইট ভেঙে দিলো!!এখন বুঝলাম থাব্রা কেন খাইসো!!শোনো,স্যারের সামনে যখন এই কথা বলব তখন ৱ্যাব যে গালে চর মারসে সেই গাল হাত দিয়ে ঢেকে রাখবা!!-কেন ম্যাডাম??– কারণ এই গাঁজাখুরি গল্প শোনার পর তোমার স্যারের কাছেও একটা চড় খাবা!!এক গালে একই দিনে দুই চড় খাওয়া ঠিক হবে না!!যাই হোক,ওই ঘটনার পরেই সিদ্ধান্ত নিলাম,নো মোর ড্রাইভার্স!!যেখানে যেখানে পার্কিং সমস্যা নাই সেখানে গাড়ি চালায়ে যাবো!!যেখানে সমস্যা সেখানে রিকশা,বাস,দরকার পড়লে হেঁটে যাবো তবুও ড্রাইভার আর না!!
আমার এই কঠিন সিদ্ধান্তের কিছুদিন পরেই উবারের আবির্ভাব!!দেশের বাইরে বেশ কয়েকবার উবার চড়ার অভিজ্ঞতা ছিল বলে উবার নিয়ে কোনো অযথা টেনশন ছিলোনা!!বরং আনন্দিতই ছিলাম যে এটলিস্ট বিপদের সাথী হিসেবে শুধু সময়ে না অসময়েও উবারকে পাওয়া যাবে!!এখন পর্যন্ত আমার উবার অভজ্ঞতা শুধু ভালোই না বেশ বিনোদন দায়কও হয়েছে!!যেমন আজকে হলো নিউ মার্কেট যাবার সময়!!আজকে উবারে চড়ার সাথে সাথে ড্রাইভার সাহেব কোরআন তেলাওয়াত এর সিডি ছেড়ে দিল!!বাংলা তর্জমা সহ তেলাওয়াত!!ওই মুহূর্তে সূরা আন নিসা র তেলাওয়াত চলছিল!!
তেলাওয়াত শুনতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে,তাই আমিও চোখ বন্ধ মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকলাম!!যে গাড়িটাতে চড়েছিলাম,ঐটা একটা নতুন গাড়ি বলেই কিনা জানিনা,এসিটা বোধয় খুবই ভালো কাজ করছিলো!!আরামদায়ক ঠান্ডা আর কোরআন তেলাওয়াত এর পবিত্র আওয়াজে গাড়ির মধ্যে খুব শান্তি শান্তি একটা পরিবেশ তৈরী হলো!!কিন্তু হঠাৎ দুই তিন আয়াত হবার পরেই ড্রাইভার সাহেব সিডি অফ করে দিলেন এবং নিজে বিভিন্ন আয়াত এর ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করলেন!!– বুঝছেন আপা,পুরুষ মানুষের চারটা পর্যন্ত বিয়ে করা জায়েজ আছে!!আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,হে(পুরুষ জাতি)তোমরা তোমাদের পছন্দ মতো একটি,দুইটি,তিনটি এবং চারটি পর্যন্ত বিবাহ করো!!ঠিক না আপা??– হুম– ঠিক কিন্তু কখন ঠিক বলেন তো??
আমি বলতে গেলাম ভাই সিডি তাই চালায়ে দেন শুনি কখন ঠিক এইটা ঐখানেই শুনি!!কিন্তু আমি বলার আগেই উনি বলতে শুরু করলেন-তখনি ঠিক যখন আপনি চারজনকে সমান মহব্বত করতে পারবেন!!কিন্তু দেখেন আমাদের দেশের পুরুষরা একজন স্ত্রীকেই সুখী করতে পারেনা অথচ জায়েজ আছে দাবি করে একাধিক বিবাহ করে!!এইটা কি ঠিক??আমি বললাম- না,ঠিক না!!এরপর ড্রাইভার সাহেব ইসলাম ধর্ম বিষয়ে যে তার অগাধ জ্ঞান এটা বোঝানোর জন্য কন্টিনিউয়াসলি কথা বলতে থাকলো!!এবং নিউমার্কেটের গেটে আমাকে নামানোর আগপর্যন্ত সে তার উবারিয় ইসলাম শিক্ষা ক্লাস চালিয়ে গেলো!!আমাকে নামাবার ঠিক আগমুহূর্তে সে বললো,আপা অনেক কথা বললাম,কিছু মনে করেন নাই তো??– না না,ঠিক আছে!!এরপর বললো- আমি কিন্তু সবাইকে কোরআন তেলাওয়াত শোনাই না!!কাস্টমার বুঝে শোনাই!!আপনাকে দেখে মনে হইলো আপনি শুনবেন!!বিরক্ত হন নাই তো আপা??– না না,কোরআন শুনে কেও বিরিক্ত হয়??আপা,যদি সত্যি ভালো লেগে থাকে,তাহলে ভাই হিসেবে একটা দাবি আছে!!আমি আপনাকে ফাইভ রেটিং দিয়েছি আপনি একটু কষ্ট করে আমাকে ফাইভ রেটিং দিয়ে দিয়েন আপা??
তার এই কথা শুনে আমি যার পর নাই টাস্কিত হলাম!!এর মানে কি??কুরআন তেলাওয়াত এর সিডি চালানো,ইসলাম বিষয়ক আলোচনা কি একটা স্ট্রাটেজি??রেটিং বেশি পাওয়ার জন্য??ড্রাইভার সাহেবের এই বিচক্ষণতা এবং অক্লান্ত চেষ্টা দেখে অতিশয় মুগ্ধ হলাম!!কিন্তু কুরআন শোনানোর পেছনে এতো তুচ্ছ একটা মতলব ছিল ভেবে আমি যারপর নাই বিরক্ত হলাম এবং তাকে এক রেটিং দিলাম!!শূন্য দিতে পারলে আরাম লাগতো কিন্তু শূন্য দেয়ার সিস্টেম নাই!!গাড়ি থেকে নেমে,ভাড়া মিটাতে মিটাতে শুধু বললাম- ভাইজান,এতো সামান্য বিষয়ে কোরআন এর সাহায্য নিলে পুলসিরাত পার হওয়ার সময় কি করবেন??সবচেয়ে বড় কাজই তো বাকি আছে,তাইনা??বড় জিনিস সেই দিনের জন্য রাখেন!!বুঝছেন??ড্রাইভার সাহেব খুবই স্তম্ভিত হয়ে তাকালো আমার দিকে,আমি স্তম্ভিত চেহারার ড্রাইভার সাহেবকে পেছনে ফেলে নিউমার্কেটের জনস্রোতে মিশে গেলাম…………