ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বাণিজ্য উপদেষ্টার হুঁশিয়ারির পর পেঁয়াজের কেজি কত হলো, জেনেনিন

২০২৫ নভেম্বর ১৪ ১৭:৩৭:০৪

বাণিজ্য উপদেষ্টার হুঁশিয়ারির পর পেঁয়াজের কেজি কত হলো, জেনেনিন

দেশে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। মাত্র ১০ দিন আগেও যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় পাওয়া যেত, তা ২ নভেম্বরের পর থেকে হঠাৎ করেই বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় পৌঁছে যায়। বাজারে এমন অস্থিরতা দেখা দেওয়ার পর সরকার উদ্যোগ নেয় এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—এই সপ্তাহের মধ্যে দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। তবে সেই সতর্কতা সত্ত্বেও এখনো বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে—ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১১০–১১৫ টাকায়, আর বাছাইকৃত দেশি বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০–১৩০ টাকায়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাইকারি বাজারেই দাম বেশি থাকায় খুচরা পর্যায়ে তারা দাম কমাতে পারছেন না। নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা কম বলেই তারা মনে করছেন।

পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে—গতকালের তুলনায় আজ পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫–১০ টাকা বেড়েছে। ছোট পেঁয়াজ যেখানে গতকাল ৯৭–৯৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আজ তা ১০০–১০৫ টাকায় উঠেছে। বড় পেঁয়াজও ১০৫–১১০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

কেন বাড়ছে পেঁয়াজের দাম?

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে—

মৌসুমের শেষ পর্যায়

সংরক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতা

বৃষ্টিতে উৎপাদন ক্ষতি

প্রতিটি স্তরে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব

আমদানি বন্ধ থাকা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—প্রতি বছরই অক্টোবর–ডিসেম্বর সময়টাতে পেঁয়াজের দামে বড় উত্থান দেখা যায়। ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সিন্ডিকেটও অনেক ক্ষেত্রে দাম বাড়িয়ে দেয়।

সরকারের অবস্থান

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে—দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই, বরং ভারতীয় পেঁয়াজ সস্তা হওয়ায় সীমান্তের ওপারে অনেক পেঁয়াজ জমা করে রাখা হয়েছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতেই একটি পক্ষ দাম বাড়াচ্ছে। মন্ত্রণালয় অনুযায়ী দেশে সাড়ে ৩ লাখ টন আগের মৌসুমের পেঁয়াজ মজুত আছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে—চলতি মাসে বাজারে ১ লাখ টন নতুন পেঁয়াজ আসবে।

ভারতের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বর্তমানে মাত্র ৮ রুপি (১২ টাকা) হওয়ায় আমদানি অনুমতি দিলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও দেশের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আপাতত আমদানি স্থগিত রাখা হয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন—চলতি সপ্তাহেও দাম না কমলে বাধ্য হয়ে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক হলে আর আমদানি অনুমতি দেওয়া হবে না। তাঁর মতে, ২৮০০টি আমদানি আবেদন থাকলেও সেগুলোর ১০ শতাংশ অনুমোদন পেলেই বাজারে পেঁয়াজের দাম ধস নামবে।

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এক প্রতিবেদনে বলেছে—কিছু মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে বাজার অস্থির। পেঁয়াজের দাম এই সময়ে সর্বোচ্চ ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। প্রতিবেশী দেশে বর্তমানে দাম মাত্র ৩০ টাকা কেজি। তাই বাজার স্থিতিশীল করতে সীমিত পরিমাণে আমদানির অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত