| ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিয়ে তাকেই করবো কার কথা বললেন : মিরাজ

খেলাধুলা ডেস্ক . স্পোর্টস আওয়ার ২৪
২০১৮ সেপ্টেম্বর ০৯ ১৭:২৭:১০
বিয়ে তাকেই করবো কার কথা বললেন : মিরাজ

মাত্র ১৯ বছর বয়সে জাতীয় দলের অভিষেক। সিরিজের দুই টেস্টে ১৯টি উইকেট শিকার করেন তিনি। তার হাত ধরেই এসেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। এক সেশনেই ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট উপড়ে ফেলার মূল নায়ক এই মেহেদী মিরাজ।

ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট ভালবাসতেন তিনি। ক্রিকেট নিয়ে অনেক স্বপ্নও ছিল তার। তাই বাবার কাছ থেকে হাজারো বাঁধা সহ্য করেও ক্রিকেট ছাড়েননি। পালিয়ে পালিয়ে খেলতে যেতেন। কিন্তু কে জানত সেদিনের পালিয়ে ক্রিকেট খেলা ছেলেটি আজ দেশের সকল মানুষের অন্তরে জায়গা করে নেবে।

রিপোর্টার সুমনার সাথে মেহেদী মিরাজ

মেহেদী মিরাজ তার ক্রিকেট জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গে। তুলে ধরেছেন তার বলা না বলা অনেক কথা।

প্রথম যেদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে মাঠে নামলেন, কেমন লাগছিল?

মিরাজ: ২০ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামি। আমার খুব ভাল লাগছিল, মূহুর্তটা খুবই উপভোগ করছিলাম। কারণ ৮/১০ বছর ধরে যেসব বড়ভাইদের খেলা টিভিতে দেখে এসেছি। বিশেষ করে সাকিব ভাই, তামিম ভাই, মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাইদের খেলা সবসময় দেখতাম, ভাল লাগত। কিন্তু আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না তাদের সাথে খেলব, তাদের সাথে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করব। আসলে সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছিল স্বপ্নের মত।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংয়ে বেশি ভাল করছেন, ব্যাটিংয়ে তেমন কোন সাফল্য আসছে না কেন?

মিরাজ: আসলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাটা অনেক কঠিন। প্রথম ম্যাচে আমার বোলিংটা আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে অনেক ভাল হয়েছিল। ব্যাটিংয়ে ততটা ভালো করতে পারিনি। তাছাড়া আমি এখন বর্তমানে ৮নম্বরে ব্যাট করতে নামি, সেখান থেকে টেষ্টের হয়ে ভাল খেলার সুযোগ থাকে। কিন্তু ওয়ানডে বা টি টোয়েন্টিতে ওই স্থানে থেকে ভালকিছু করার সু্যোগটা তেমন একটা থাকে না। তবে আমি বিশ্বাস করি যে বেশি বেশি পরিশ্রম করলে ইনশাআল্লাহ্‌ ব্যাটিংয়েও ভালকিছু করতে পারব।

ক্রিকেটারদের মধ্যে আপনার পছন্দের খেলোয়াড় কে ?

মিরাজ: আমার সবথেকে পছন্দের খেলোয়াড় বাংলাদেশ দলের মুশফিক ভাই। অন্য সবাইকেও ভাল লাগে। কিন্তু ছোটকাল থেকেই টিভিতে ভাইয়ার খেলা দেখতাম। খুব ভাল লাগত। তাই মুশফিক ভাইকে বেশি ভাল লাগে।

দেশে বা দেশের বাইরে এমন কোন খেলোয়াড় আছে যাকে আপনি অনুকরণ করেন বা তার মত হতে চান?

মিরাজ: কম বেশি সবাইকেই অনুকরণ করি। কারন প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মধ্যেই ভাল অনেক দিক আছে। তাদের লাইফ স্টাইল বা খেলার দিকগুলো খেয়াল করি। আমরা শুধু দেশের বাইরের খেলোয়াড়দের দেখি যে তারা ভাল খেলছে। কিন্তু আমাদের ড্রেসিংরুমেই যে ৫জন সিনিয়র বা অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে, যারা অনেক বছর ধরে খেলছে। আমার মনে হয়না যে বিশ্বে একসাথে ২০০ বা ৩০০ ম্যাচ খেলেছে এমন খেলোয়াড় আছে। আসলে আমাদের দেশের ভিতরেই অনেক অভিজ্ঞ আর সেরা সেরা অল-রাউন্ডার আছে, যাদের কাছ থেকে অনেককিছু শেখার বা জানার আছে।

বিয়ে তাকেই করবো : মিরাজ

বলা হয়, সি‌নিয়ররা জ্ব‌লে না উঠ‌লে দল ভাল ফল আন‌তে পা‌রে না। বিষয়‌টি কিভা‌বে দেখেন?

মিরাজ: অবশ্যই। আমি মনে করি সিনিয়ররাই একটা খেলার ভীত তৈরী করেন। আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়রা অনেক অভিজ্ঞ। তারা ১৪, ১৫ বছর ধরে খেলছেন। তারা আমাদের সাথে অনেককিছু ভাগাভাগি করেন। তাদের কাছে আমরা অনেককিছু শিখতে পারি। তাই আমরা যারা জুনিয়র, আমাদের খেলার আরো ডেভেলপ করতে হবে। আর তাদের সাথে খেলার সামঞ্জস্যতা আনতে পারলে যে কোনো ম্যাচে অনেক ভাল ফল আশা করতে পারব।

এবারের এশিয়া কাপ সিরিজটা কেমন হতে পারে?

মিরাজ: অবশ্যই ভাল হবে। আশা করছি আমাদের পক্ষে থাকবে। গত এশিয়া কাপ ওয়ানডে বা টি টোয়েন্টি ২ টাতেই আমরা সামান্য ব্যবধানে হেরেছি। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য ছিল। তো এবারো এমন সুযোগ আসলে ইনশাআল্লাহ্‌ আমরা আল্লাহ্‌র রহমতে একটা ভাল ফল পাবো। আশা করি যে এবার ভালকিছু হবেই।

পরশু দেশ ছাড়বেন। প্রস্তুতি কেমন নিলেন এবারের এশিয়া কাপকে ঘিরে?

মিরাজ: আমরা কিভাবে খেলব বা কিভাবে আগাবো এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে বেশকিছু প্লান করা হয়েছে। তাছাড়া আমাদের কোচ যেভাবে গাইড লাইন দিয়েছেন। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। এদিকে আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়রা আছে, তারা সবসময় আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। কিভাবে কি করতে হবে, একটা চাপের মুখে কিভাবে খেলতে হবে। এগুলাও ভাইয়ারা আমাদের গাইড করছেন।

বিয়ে তাকেই করবো : মিরাজ

নতুন কোচ টি‌মে যোগ দি‌য়ে‌ছেন। প্রথম সি‌রিজ হি‌সে‌বে বলা যায় তি‌নিও সফল। কা‌ছে থে‌কে কেমন ম‌নে হ‌লো?

মিরাজ: আমাদের বর্তমান যে কোচ, একপর্যায়ে বলতে গেলে তিনি সফলই। তার সব থেকে ভালদিক হল, খুব তাড়াতাড়ি সবার সাথে মিশতে পারেন। তার সাথে যেকোন বিষয়ে, খোলামনে আলোচনা করা যায়। তাছাড়া তিনি আমাদের খুব ভালভাবে অনুশীলনও করাচ্ছেন। আমরাও খুব ভাল কাজ করতে পারছি। আশা করি সামনে আরো ভাল কিছু নতুন কাজ আমাদের শিখাবেন তিনি। আমরা তার কাছ থেকে নতুন কিছু শিখতে পারব।

আপনার সফলতা নিয়ে নিজে কতটুকু সন্তুষ্ট?

মিরাজ: আলহামদুলিল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে এত অল্প বয়সে যা পেয়েছি সেটা অনেক। আমি এতটা সফলতা অর্জন করতে পারব কখনো ভাবিনি। তবে এই অর্জনের কৃতিত্ব আমার না। যারা আমাকে এখানে আসতে সাহায্য করেছেন সফলতা তাদের। বিশেষকরে আমার দেশীয় কোচেরা আমাকে খেলা শিখিয়েছেন। এমনকি বিসিবির কাছ থেকেও অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। আমার সকল কৃতিত্ব তাদের সকলকেই দিতে চাই।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটা উপহার পেয়েছিলেন। কেমন ছিল তখন আপনার অনুভূতি?

মিরাজ: শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ২০১৬ সালে আমার খেলার দক্ষতা দেখে আমাকে উপহার হিসেবে কিছু দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এবং তিনি তার কথা রেখেছেন। আমি একবছর পর তার কাছ থেকে জমি পাই। তিনি আমাকে থাকার ব্যাবস্থাও করে দিয়েছেন। সেজন্য আমি অনেক খুশি ও কৃতজ্ঞ।

ক্রিকেটকে ঘিড়ে আপনার আনন্দময় স্মৃতি জানতে চাই?

মিরাজ: আমার সব থেকে আনন্দময় সময় হল, যেদিন আমার জাতীয় দলে অভিষেক হয়। বিশেষকরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে ম্যাচটা খেলি। ওই দিনটা আমার কাছে পুরো স্বপ্নের মত। এখনো দিনটার কথা মনে পড়লে খুব আনন্দ হয়।

অবসর কাটে কীভাবে?

মিরাজ: খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারি না। তাই অবসর সময় পেলেই পরিবারের সাথে কাটে। পরিবারের সাথে সময় কাটাতে আমার খুব ভাল লাগে।

কি খেতে ভালোবাসেন?

মিরাজ: পছন্দের খাবারের মধ্যে আলু-ভর্তা, ডাল আর গরুর মাংস খেতে ভালবাসি।

কেমন পোশাকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

মিরাজ: আমি সবসময় সাধারণভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করি। তাই যখন যেটা ভাল লাগে তখন সেটাই পড়ি। তবে পছন্দের রং লাল-সবুজ। যদিও এই রংয়ের পোষাক পড়ি না। শুধু মাঠেই পড়া হয়।

বিয়ের কথা জানতে চাই ?

মিরাজ: বিয়ে নিয়ে এখনো কোন চিন্তা বা পরিকল্পনা করিনি। তবে ইনশাআল্লাহ্‌ ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পর বিয়ে করার ইচ্ছা আছে।

পছন্দের কেউ কি আছে?

মিরাজ: হ্যাঁ। কিন্তু এখনি বিয়ে নিয়ে ভাবছি না। তবে বিয়ে করলে অবশ্যই আমি যাকে পছন্দ করি তাকেই বিয়ে করব।

ক্রিকেট জীবনের বাইরে কি অন্যকিছু করার ইচ্ছা আছে?

মিরাজ: খুলনার ফুলতলায় আমার ছোটখাটো একটা প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে গরীব মেধাবী ছেলে-মেয়েদের বিনা পয়সায় কম্পিউটার শিখানো হয়। কম্পিউটারের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও দেওয়া হয়। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠানকে আরো বড় করার। তাছাড়া বরিশালে একটা মাদ্রাসা করার চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ্‌ করতে পারব। আসলে মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে?

মিরাজ: আমি এক কথায় বলতে চাই, জীবনে বড় হতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সেটা খেলা বা অন্যকোন কাজের ক্ষেত্রেই হোক। কোন কাজে সফলতা আনতে হলে অবশ্যই লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। যদি আমি পিছনে ফিরে তাকাই, চিন্তা করি পারব না। তাহলে কখনোই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাই আমি পারব, একথা চিন্তা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সফলতা নিশ্চিত আসবেই।

সময় দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মিরাজ: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ, সাথে ডেইলি বাংলাদেশকেও। সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশক

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

ক্রিকেট

শঙ্কার মুখে এবার বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ

শঙ্কার মুখে এবার বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য এই সিরিজটিকে ...

হাইভোল্টেজ ম্যাচে শেষ বলে নির্ধারণ হল ফলাফল

হাইভোল্টেজ ম্যাচে শেষ বলে নির্ধারণ হল ফলাফল

আইপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ মুখোমুখি হয়েছে চেন্নাই এবং ব্যাঙ্গালুরো। প্লে অফের জন্য এই ম্যাচ ...

ফুটবল

কোপার আগে ব্রাজিল শিবিরে নেমে এলো বড় দুঃসংবাদ

কোপার আগে ব্রাজিল শিবিরে নেমে এলো বড় দুঃসংবাদ

কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্ট শুরু হবে ২০ জুন। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মরসুম থেকে আমরা মাত্র এক মাসেরও ...

এবছর আর্জেন্টিনার না, টুর্নামেন্টে যোগ দিচ্ছে জাপান

এবছর আর্জেন্টিনার না, টুর্নামেন্টে যোগ দিচ্ছে জাপান

বঙ্গবন্ধু কাবাডি কাপের চতুর্থ আসর শুরু হচ্ছে আগামী ২৬ মে। গতবারের আলোচিত দেশ এবারে আর্জেন্টিনা ...



রে