আমার ছবি তুলে আর কি হবে : রুবেল
পরশু গায়ানা থেকে আসার পথে দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় বিমানে যেখানে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করেছেন, রুবেল পারেননি। মুখে তাঁর রাজ্যের আঁধার, পুরোটা পথে পড়ে রইলেন চোখ বুজে। রুবেলের চেহারা দেখে মাশরাফি বিন মুর্তজা রসিকতা করে যে নামে তাঁকে ডাকলেন, সেটি লিখলে অনেকে আবার অধিনায়কের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ তুলবেন!
রুবেলের মুখে এই বিষাদের ছায়া দেখা গেছে গত মার্চে কলম্বো থেকে ঢাকায় আসার পথেও। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ‘ট্র্যাজেডি’তে তাঁর ভূমিকাও যে কম নয়। ব্যাটিংয়ের শেষ দিকে মুশফিক যেমন বারবার দুঃখের গল্প লিখছেন, বোলিংয়ে ডেথ ওভারে ডোবাচ্ছেন রুবেল। রুবেল কখনো ভুলতে পারেন না তাঁর অভিষেক সিরিজের ফাইনালটার কথা। যে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের দোরগোড়া থেকে বাংলাদেশ ফিরে আসে তাঁর মাত্র দুটি ওভারেই। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ১৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ১১৪ রানেই। শক্তিশালী শ্রীলঙ্কানদের বিপক্ষে জয়টা যখন ক্রমেই চলে আসছিল হাতের কাছে, তখন বাংলাদেশের মহা সর্বনাশ করেছিল ফারভিজ মাহরুফ-মুত্তিয়া মুরালিধরনের অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেট জুটি (৩৯*)। ৩০ বলে শ্রীলঙ্কার দরকার ৩৫ রান, রুবেল এ সময় ২ ওভারে দিয়ে বসলেন ৩২ রান! মুরালিই নিলেন ৩১ রান। অভিষেক সিরিজেই রুবেল মনে হয় বুঝে গিয়েছিলেন ডেথ ওভারে তাঁর ভোগান্তি আছে আরও!
সেই ভোগান্তির যে এত চড়া মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশকে, কে ভেবেছিল! এ বছরই এমন ঘটনা ঘটল তিনবার। গত মার্চে কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের দরকার ছিল ১২ বলে ৩৪। প্রচণ্ড চাপে রুবেলের কাছে দিনেশ কার্তিক হয়ে উঠলেন ‘অতিমানব’। এক ওভারে দিলেন ২২ রান। সৌম্য সরকার পারলেন না ৬ বলে ১২ রান আটকাতে। ভারত জিতে গেল নিদাহাস ট্রফি।
গত মাসে দেরাদুনে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৩৫ রানের ছোট লক্ষ্য দেওয়ার পরও আফগানদের জন্য ম্যাচটা কঠিন করে তুলেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ১৮ ওভার যে দুর্দান্ত বোলিং হয়েছিল সেটি একাই শেষ করে দিলেন রুবেল। তাঁর করা ১৯তম ওভারে ৪, ৬, ৪, ৬—২০ রান তুলে ম্যাচ নিজেদের করে নিলেন মোহাম্মদ নবী।
গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ডেথ ওভারে রুবেল যে বোলিংটা করলেন সেটি আরও মর্মান্তিক! ৪৮ ওভার শেষে ক্যারিবীয়দের রান ৯ উইকেটে ২৪২। ওই সময়ে রুবেলই ছিলেন মাশরাফির সবচেয়ে সেরা অস্ত্র। ৮ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট, দলের সবচেয়ে সফলতম বোলার এত বাজে বোলিং করলেন, ৪৯তম ওভারে দিলেন ২২ রান। রুবেলের এই বাজে বোলিংয়ের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি মাশরাফি, ‘ওই সময় ওকে ছাড়া কাকে দেব বলেন? আগের আটটা ওভারে সে অসাধারণ বোলিং করেছে। তিন উইকেট নিয়েছে। ওকে আমার নির্দেশনা ছিল একটাই, শেষ উইকেটটা নিয়ে নিতে হবে। নিতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২৫০ হতো কি না সন্দেহ! অথচ ও রান দিয়ে ফেলল কত!’
ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ডেথ ওভারে যতটুকু সাফল্য পেয়েছেন রুবেল, সেটিও ঢাকা পড়ে যাচ্ছে এখন। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত বোলিং ভোলার নয়। কিন্তু সেই ইয়র্কার, গতি কোথায়? একই ভুল আজও করলে গেইল-লুইস-হেটমায়াররা যে তাঁকে ক্যারিবিয়ান সাগরে আছড়ে ফেলতে দুবার ভাববেন না, তা জেনেই ওয়ার্নার পার্কের নামতে হবে রুবেলকে।