| ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাঙালির দোজখ ভাবনা

জাতীয় ডেস্ক . স্পোর্টস আওয়ার ২৪
২০১৭ জুন ২১ ১৫:৪৫:৫৫
বাঙালির দোজখ ভাবনা

কথায় আছে, “যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা”। অতএব যারা তাকে দেখতে পারেন না তাদের কাছে যে এই সফরগুলো আগ্রহের তাতে আর অবাক কি? তবে আমার আগ্রহের জায়গাটাও আবার এখানেই।

শেখ হাসিনা ভারত থেকে ফিরতে না ফিরতে আবার দেশ বিক্রির রব উঠেছে। “দেশ রসাতলে গেল”- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভুটান সফরের পর পরই এই সফরকে ‘ব্যর্থ’ বলে এমন রব তুলেছিলেন অনেকেই। আর সদ্য সমাপ্ত সৌদি আরব সফরে মার্কিন রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ আর এমনকি বহুল আলোচিত এই ইসলামিক আরব আমেরিকান সামিটে তার যোগদানও নাকি দুর্ভাগ্যজনক।

মন্তব্যগুলো অনেকের কাছে অগ্রহণযোগ্য। আমি কিন্তু বিষয়গুলোকে সেভাবে দেখিনা। আজকের মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বেচা-কেনাটাই প্রত্যাশিত। এতদিন ধরে আমরা শুধু ভারতের কাছ থেকে কিনেই চলেছি। তাদের সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি হিমালয়সম। সম্প্রতি এর সামান্য ব্যতয় ঘটেছে। গত বছর ভারতে আমাদের রপ্তানি বেড়েছে তিন শতাংশ। ঘাটতি একটু হলেও কমেছে। আর এর পুরো কৃতিত্বতো শেখ হাসিনারই।

তিনি ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের উৎপাদিত মদ আর সিগারেট ছাড়া অন্য সব পণ্যের উপর “শূন্য শুল্কের” ওয়াদা আদায় করেছেন। ভারতীয়রা এখন আমাদের দেশে জমিও কিনছেন আর সেসব জমিতে গড়ে উঠবে বিশাল সব শিল্পকারখানা। কর্মসংস্থান হবে আমার দেশের মানুষের। এফবিসিসিআইয়ের সদ্য সাবেক সভাপতি মতলুব আহম্মেদ সেদিন বলছিলেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় গ্রুপ শাপুরজি-পালংজি এরই মধ্যে এদেশে তাদের বিনিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। এগিয়ে আসছে আদানীসহ আরো বেশকিছু বড় বড় গ্রুপ। আর এই সব বিনিয়োগের উদ্দেশ্য কিন্তু আমার দেশের বাজার না।

ভারতীয় বিনিয়োগে পণ্য উৎপাদিত হবে বাংলদেশে আর রপ্তানি হবে ভারতের অবহেলিত “সাত বোনের” ঘরে। কাজেই দেশের পণ্য যখন ভারতে বিক্রি হচ্ছে আর ভারতীয় ব্যবসায়ী কিনছেন এদেশে জমি - ভুলটা কোথায় বললেন নিন্দুকেরা।আর প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর? সেতো ব্যর্থই। এই সফরে আরো অনেক কিছুর মতই ভুটানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমাদের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে রপ্তারির ব্যপারে সমঝোতা হয়েছে। বিষয়টা ঝুলেছিল দীর্ঘদিন। কারণটাও বোধগম্য। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে ভালো কথা, কিন্তু তাতো আনতে হবে ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর দিয়েই। সম্প্রতি ত্রিপুরা সফরের সময় দেখে এসেছি পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপুলত্ব। সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের একটা বড় অংশ রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশে। নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়া ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের এক দারুন নির্দশন এটি।

এখন ভারত আরো এক ধাপ এগিয়ে এসে ভুটানের বিদ্যুৎ তার ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বাংলাদেশে সঞ্চালনে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগীতার ক্ষেত্রে এটি একটি অনন্য নজির। বাংলাদেশের সাথে তার বৃহত্তম প্রতিবেশীর সম্পর্কের বৈরিতাকে পুঁজি করে ফায়দা লোটার ব্যবসা বাংলাদেশি-পাকিস্তানিদের বহুদিনের। এদেশে ভারতীয় উগ্রবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ায় অনেক বেশি পারঙ্গমতা দশ ট্রাক অস্ত্রের এই সব ফেরিওলাদের। এবারে তাদের ব্যর্থতার উপর দাড়িয়েইতো ভুটান সফরের মজবুত ভিত্তি জননেত্রী শেখ হাসিনার। কাজেই তাদের কাছে এই সফর ব্যর্থ নয় তো কি।

আসুন সৌদী আরবে। সৌদী বাদশা সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দাওয়াত দিয়ে সমাদরে নিয়ে এসেছেন। ট্রাম্পের গলায় পরিয়ে দিয়েছেন দড়ির মত মোটা সোনার চেইন। ট্রাম্পকে ঘিরে ঐতিহ্যবাহী সৌদি নাচে-গানে মেতেছেন সেদেশের বিশিষ্টজনেরা। ফেসবুক আর মিডিয়ার কল্যাণে এসব দৃশ্য আমাদের অনেক দেখা। এই সম্মেলনেই ট্রাম্পের সাথে দেখা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। এই দুজনের এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। ডোনাল্ড ট্রাম্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশ সফরেরর আগ্রহ জানিয়েছেন। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র সেটা নিশ্চিত করেছে।

আশাই করা যায় সামনে আবার দেখা হবে বিশ্বের পরাক্রমতম রাষ্ট্রপ্রতির সাথে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু ভাবুন-একবার কি ভালোই না হতো, এই সাক্ষাৎটা হতো যদি জেদ্দায় না হয়ে ঢাকায়। যে দেশের জন্মের বিরোধী ছিল ড্রোনাল্ড ট্রাম্পের এক সময়কার পূর্বসুরী রিপাবলিকান মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন, আর যার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার সদ্য স্বাধীন দেশটিকে আখ্যায়িত করেছিলেন “তলাবিহীন ঝুড়ি” হিসেবে, সেই দেশটিই কিনা সফরে আগ্রহী মার্কিন রাষ্ট্রপতি - বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে বড় সার্টিফিকেট আর কি হতে পারে? অথচ ঢাকায় না হয়ে, এই দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ কিনা হলো আরব মরুতে! সত্যিই কি দুর্ভাগ্যজনক।

সেই দিন আড্ডায় এক বন্ধু বলছিল বাঙালির দোজখে নাকি প্রহরীরর প্রয়োজন পরবে না। একজন যদি কোন ভাবে দোজখের ফাকগলে বেরুতেও পারে, তাকে পা ধরে টেনে নামাবে অন্যরা। একজন মহিয়সী নারী, যিনি তার সংসার-সন্তান সব ছেড়ে ছুটে এসেছিলেন এদেশের মাটি আর মানুষের টানে, পিতা আর পরিবার হারানোর শোক যার শক্তি, এদেশকে যিনি বিশ্বমানচিত্রে “তলাবিহীন ঝুড়ি” থেকে “উপচে পড়া ঝুড়িতে” উত্তরণ ঘটিয়েছেন- আমরা তার মত হতে না পারি, অন্তত তাকে ব্যঙ্গ করতে যেয়ে নিজেদের কুপমণ্ডুত্ব যেন প্রকাশ না করি।

তবে এতকিছুর ভিতরেও আশা দেখি, দেখি ভালোকিছুতে উত্তরণের সম্ভবনা। সম্প্রতি “ভিশন ২০৩০” জনসম্মুখে উপস্থাপিত হয়েছে। অনেকে একে “ভীষণ ২০৩০” বলে সমালোচনাও করেছেন। আমি করি না। আমি “ভিশন ২০৩০”-র সাথে “ভিশন ২০২১” আবার আর “ভিশন ২০৪১”-র ভীষণ মিল খুঁজে পাই। আশান্বিত হই। হোক না অনুকরণ। তাওতো ভালো কিছু থেকে ভালোকিছু শেখার চেষ্টা। এভাবে চললে হয়তো একদিন বাঙালির দোজখে সত্যি সত্যি প্রহরীর প্রয়োজন পরবে।লেখক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

ক্রিকেট

মাঠে নামতে প্রস্তুত গেইল

মাঠে নামতে প্রস্তুত গেইল

ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে আইপিএল প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। ...

অবসরের দিনক্ষণ জানিয়ে দিলেন ধোনির!

অবসরের দিনক্ষণ জানিয়ে দিলেন ধোনির!

ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রচুর ফ্যান ফলোয়িং রয়েছে। এই তারকা ক্রিকেটার ভক্তদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ...

ফুটবল

কোপা আমেরিকা শুরুর আগে নতুন করে ইনজুরি নিয়ে বড় ধাক্কা খেল ব্রাজিল

কোপা আমেরিকা শুরুর আগে নতুন করে ইনজুরি নিয়ে বড় ধাক্কা খেল ব্রাজিল

এবারের কোপা আমেরিকা দিয়ে উন্নতি করতে চায় ব্রাজিল। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট মাঠে নামার আগেই প্রবল ...

কোপার আগে ব্রাজিল শিবিরে ইনজুরির ছড়াছড়ি, নতুন করে স্কোয়াডে চারজন

কোপার আগে ব্রাজিল শিবিরে ইনজুরির ছড়াছড়ি, নতুন করে স্কোয়াডে চারজন

ব্রাজিলই প্রথম কোপা আমেরিকায় অংশগ্রহণকারী দল ঘোষণা করে। কোচ দারিভাল জুনিয়র তার প্রথম মেয়াদে কিছু ...



রে