ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারি দুই নেতা পাননি ধানের শীষ, ফেসবুকে তোলপাড়

২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১৫:৫০:০৮

বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারি দুই নেতা পাননি ধানের শীষ, ফেসবুকে তোলপাড়

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় জায়গা পাননি দলের দুই পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা—সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এ খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

বিএনপি ২৩৭টি আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আগেভাগে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করায় দলের ভেতরে অনেক কোন্দল কমে আসবে বলে ধারণা করা হলেও, এই দুই নেতার বাদ পড়া দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।

রিজভীর নাম নেই প্রার্থী তালিকায়

রুহুল কবির রিজভী দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। জিয়া পরিবারের প্রতি আনুগত্য ও দলের প্রতি তাঁর অবিচল নিষ্ঠা তাঁকে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয় করেছে। তবুও এবারের ঘোষিত তালিকায় তাঁর নাম নেই। কুড়িগ্রাম-২, রাজশাহী-৫ কিংবা ঢাকার কোনো আসনে তাঁকে প্রার্থী করা হবে—এমন আশা ছিল তাঁর সমর্থকদের। কিন্তু ওই আসনগুলোতে অন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

রিজভী একসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন এবং রাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্য মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিএনপির আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

শত শত মামলার আসামি হয়েও মনোনয়ন পাননি সোহেল

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল দলের তৃণমূলের কাছে ‘ত্যাগী ও সংগ্রামী’ নেতা হিসেবে পরিচিত। আন্দোলনের দিনগুলোতে তিনি মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে সারাদেশে চার শতাধিক মামলা রয়েছে, যা তাঁকে বিএনপির মধ্যে ‘সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক মামলার আসামি’তে পরিণত করেছে।

দলের বিভিন্ন দায়িত্বে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন সোহেল—ছাত্রদলের সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এবং পরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁর সমর্থকরা আশা করেছিলেন যে, এবার ঢাকা-৮ বা ঢাকা-৯ আসনে তিনি ধানের শীষ পাবেন। কিন্তু ঘোষিত তালিকায় তাঁর নামও অনুপস্থিত।

তৃণমূলের ক্ষোভ ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া

দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়েও এই দুই নেতার বাদ পড়া নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন—“দলের জন্য আজীবন ত্যাগ করেও কি মনোনয়ন পাওয়া যায় না?”

তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ঘোষিত তালিকাটি প্রাথমিক। প্রয়োজনে এতে পরিবর্তন বা সংযোজন আনা হতে পারে।

আরও বাদ পড়েছেন হেভিওয়েট নেতারা

প্রথম দফার তালিকায় আরও বাদ পড়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুজ্জামান দুদু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুমিন ফারহানা ও আরও বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মনোনয়ন পাননি।

উল্লেখ্য, সোমবার গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন। তিনি জানান, বাকি ৬৩টি আসনে দলের মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রার্থী দেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

জাতীয় এর অন্যান্য সংবাদ