ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

এনসিপির সঙ্গে সমঝোতা হলে বদলাতে পারে বিএনপির হিসাব-নিকাশ

২০২৫ নভেম্বর ০৪ ১০:৪২:০৯

এনসিপির সঙ্গে সমঝোতা হলে বদলাতে পারে বিএনপির হিসাব-নিকাশ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। বাকি ৬৩টি আসনের মধ্যে ৪০টি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বাকি ২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে পরবর্তী পর্যায়ে।

তবে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র সঙ্গে সমঝোতা হলে এই হিসাব-নিকাশে পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

প্রার্থী তালিকা নির্ধারণে দীর্ঘ প্রক্রিয়া

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।

দলের সূত্র জানায়, চূড়ান্ত তালিকা তৈরির আগে তিন দফা জরিপের ফলাফল বিবেচনা করা হয়। একই সঙ্গে গত এক মাস ধরে তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য — নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সারাদেশের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন।

পর্যালোচনা শেষে ২৬০ আসনের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আলোচনা করে ২৩৭ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। বাকি আসনগুলোতে এখনো ঐকমত্য না হওয়ায় সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।

নেতাদের বক্তব্য

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন,

“দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছি।”

আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,

“এবার কোনো পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী থাকছে না। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরিবার থেকেও কেউ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।”

তিনি জানান, ঘোষিত তালিকার বাইরে থাকা আসনগুলোতে বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।

এনসিপির সঙ্গে আলোচনা

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–র সঙ্গে বিএনপির আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। চূড়ান্ত সমঝোতা হলে, এই দলকেও কয়েকটি আসন ছাড়তে পারে বিএনপি। ফলে শরিকদের জন্য নির্ধারিত ৪০ আসনের বণ্টনে কিছু পরিবর্তন হতে পারে।

এক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন,

“৬৩টি খালি আসনের মধ্যে ৪০টি শরিকদের জন্য রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এনসিপির সঙ্গে সমঝোতা হলে সেই হিসাব কিছুটা পাল্টাতে পারে।”

মনোনয়ন থেকে বাদ পড়লেন যাঁরা

ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় দলের বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ অনুপস্থিত।তাদের মধ্যে রয়েছেন—

সহ–আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২),

ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু,

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ অনিশ্চিত

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফেনী–১, দিনাজপুর–৩ ও বগুড়া–৭ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে দলের সূত্র বলছে, তার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না।

নাগরিক ঐক্যের অবস্থান

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,

“আসন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এখনও আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, তবে আমরা একটি প্রস্তাবিত তালিকা জমা দিয়েছি।”

খালি থাকা ৬৩টি আসন

বিএনপির প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি এমন আসনগুলো হলো —

ঠাকুরগাঁও–২, দিনাজপুর–৫, নীলফামারী–১ ও ৩, লালমনিরহাট–২, বগুড়া–২, নওগাঁ–৫, নাটোর–৩, সিরাজগঞ্জ–১, পাবনা–১, ঝিনাইদহ–১, ২ ও ৪, যশোর–৫, নড়াইল–২, বাগেরহাট–১, ২ ও ৩, খুলনা–১, পটুয়াখালী–২ ও ৩, বরিশাল–৩, ঝালকাঠি–১, পিরোজপুর–১, টাঙ্গাইল–৫, ময়মনসিংহ–৪ ও ১০, কিশোরগঞ্জ–১ ও ৫, মানিকগঞ্জ–১, মুন্সিগঞ্জ–৩, ঢাকা–৭, ৯, ১০, ১৩, ১৭, ১৮ ও ২০, গাজীপুর–১ ও ৬, নরসিংদী–৩, নারায়ণগঞ্জ–৪, রাজবাড়ী–২, ফরিদপুর–১, মাদারীপুর–২, সুনামগঞ্জ–২ ও ৪, সিলেট–৪ ও ৫, হবিগঞ্জ–১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ ও ৬, কুমিল্লা–২ ও ৭, লক্ষ্মীপুর–১ ও ৪, চট্টগ্রাম–৩, ৬, ৯, ১১, ১৪ ও ১৫ এবং কক্সবাজার–২।

শাহারিয়ার শাকিল/

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত