ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আফসোসের আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশের ভক্তরা

মুস্তাকিম
মুস্তাকিম

জুনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ১৪ ২৩:১৮:১৬

আফসোসের আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশের ভক্তরা

৯ই অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে হংকং চায়নার বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৪৬তম স্থানে থাকা হংকংয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই ড্রকে প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হলেও, ম্যাচের একাধিক সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়ার আক্ষেপ ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে প্রবলভাবে রয়ে গেছে। কাই তাক স্পোর্টস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত এই অ্যাওয়ে ম্যাচে বাংলাদেশ দল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোল করতে ব্যর্থ হওয়ায় পূর্ণ পয়েন্ট অর্জন করতে পারেনি।

ম্যাচের প্রথমার্ধে একটি পেনাল্টি গোলে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। বিরতির পর দ্বিতীয় অর্ধে খেলার গতি কিছুটা বাড়লে, ৭৩ মিনিটে ফাহমিদুল একটি অসাধারণ সুযোগ পান। সাদের ডান দিক থেকে আসা একটি দুর্দান্ত ক্রস থেকে ফাহমিদুল গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি, যা ২-১ গোলের লিড এনে দিতে পারতো। ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি ছিল এক-এক পরিস্থিতি, যেখানে শুধুমাত্র গোলরক্ষক ছাড়া আর কোনো ডিফেন্ডার ছিল না এবং গোলকিপারও এমন অবস্থানে ছিলেন না যে ফাহমিদুলকে আটকাতে পারতেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এমন পরিস্থিতিতে গোল হওয়া খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু ফাহমিদুলের 'শিশুসুলভ' ভুলে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়। এর আগেও, প্রথমার্ধের শেষ ১০ সেকেন্ডে হামজা চৌধুরী একটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন, কিন্তু তিনিও গোল করতে পারেননি।

ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে হংকংয়ের একজন খেলোয়াড় সুমিত শঙ্খকে ফাউল করায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে স্বাগতিক দল ১০ জনের দলে পরিণত হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ৮৩ মিনিটে গোল করে সমতায় ফেরে। ফাহিমের দারুণ ক্রস এবং ফাহমিদুলের হেডের পর রাকিব গোলটি করেন।

ম্যাচ জুড়ে হামজা চৌধুরী অসাধারণ খেলেছেন, যিনি মাঠে উপরে উঠেছেন, নিচে নেমেছেন এবং মিডফিল্ডে আক্রমণ তৈরি করেছেন। একটি অ্যাওয়ে ম্যাচে, যেখানে প্রায় ৫০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের গ্যালারি লাল রঙে (হংকংয়ের সমর্থন) পূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশের কোনো সমর্থক ছিল না, সেখানে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স প্রশংসার দাবি রাখে। হংকং দলে ব্রাজিলিয়ান সহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠিত লিগের ফুটবলাররা থাকলেও, বাংলাদেশের দল তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এই ম্যাচটি জিততে পারলে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক হতে পারতো এবং এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে লড়াইয়ে থাকার সুযোগ তৈরি হতো।

কোচের কৌশল এবং দলের পরিপক্কতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বাংলাদেশ দল আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ক। দল এখন আক্রমণ করতে পারে এবং নিজেদের মধ্যে বিল্ড-আপ খেলার চেষ্টা করে। যদিও ফিনিশিংয়ে এখনও উন্নতির প্রয়োজন, তবে দলের এই প্রচেষ্টা প্রশংসার যোগ্য। অতীতে বাংলাদেশ দল প্রায়শই ৯০ মিনিটের পরেও গোল খেয়ে ম্যাচ হারাতো, তবে এই ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে সমতায় ফেরার পর শেষ মিনিটে আর কোনো গোল হজম না করা দলের উন্নতির একটি বড় দিক। যদিও হংকংয়ের পেনাল্টির পেছনে তারিক কাজীর ডি-বক্সের ভেতর ফাউল ছিল, যা তাঁর বল নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতার ফল, তবে সামগ্রিকভাবে এই ড্র বাংলাদেশের জন্য একটি অর্জন।

এই ম্যাচের প্রধান আক্ষেপ হলো ফাহমিদুলের সেই 'শিশুসুলভ' গোল মিস। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে কাই তাক স্পোর্টস অ্যারেনায় ম্যাচের গল্পটাই অন্যরকম হতে পারতো। বাংলাদেশের ফুটবলে এই 'নবজাগরণের' পরও কিছু আফসোস রয়ে গেল। তবে, আগামী ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এই পারফরম্যান্স দলকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

আলভী/

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

ফুটবল এর অন্যান্য সংবাদ