পৃথিবীর একমাত্র ‘রোমান্টিক ডাকবাক্স’জেনেনিন কোথায়
হামবুর্গ থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বনের এই গাছ ডাক বাক্সটিতে চিঠি পৌঁছে দিতে প্রতিদিন ছুটে চলেন হলুদ ইউনিফর্ম পরিহিত এক পোস্টম্যান। তিন মিটার লম্বা একটি মই দিয়ে গাছে উঠে সেই ডাক বাক্সে চিঠি পৌঁছে দিলেই পোস্টম্যানের দায়িত্ব শেষ। এরপর নিজ দায়িত্বে সেই চিঠি খুলে দেখেন কৌতূহলী মানুষ। নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করে সেই চিঠি লেখা হয় না। মনের মানুষ খুঁজতে নিজের পছন্দের বিবরণ দিয়ে চিঠি লেখা হয়। সেই চিঠি পড়ে যদি কারো জবাব দিতে ইচ্ছা হয়, তা হলে দেবে আর ভালো না লাগলে সেখানেই রেখে দিতে হবে। শর্ত একটাই, কেউ যদি পছন্দ করে কোন চিঠি নিয়ে যায় তা হলে তাকে অবশ্যই সেই চিঠির জবাব দিতে হবে।
বেগুনি রঙের একটি খামে করে চিঠি পাঠানো জার্মানির বাভারিয়ার বাসিন্দা ডেনিজ তার সংক্ষিপ্ত চিঠিতে লিখেছেন, নিজেকে নিয়ে হাসতে ভয় পান না তিনি, ভালোবাসেন প্রকৃতি। তিনি জানেন তিনি কী চান, একাকীত্ব জীবন নিয়েও অখুশি নন। তবে তাকে চমক দিতে পারবেন বলে বিশ্বাস করলে, তিনি আশা করেন এই গাছ পোস্ট বাক্সের মাধ্যমেই তাকে খুঁজে নেবে। শুধু ডেনিজই নন, তার মতো আরো হাজারো মানুষ লিখে পাঠান মনের কথা। ব্রান্ডেনবার্গের ম্যারি এমন একজনকে খুঁজছেন যে কিনা নাচতে পারেন। স্যাক্সোনির হেনরিচ একজন ভ্রমণসঙ্গী খুঁজছেন এবং চীনের সিজিয়াঝুয়াংয়ের লিউ জানতে চান, এমন কোনো জার্মান নারী কি আছেন যিনি জীবনসঙ্গী হিসেবে একজন চীনা নাগরিককে খুঁজছেন।
৭২ বছর বয়সী কার্ল হেইনজ মার্টেনস ২০ বছর ধরে পোস্টম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন এই ওক গাছের ডাক বাক্সে। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন চিঠি নিয়ে ছুটে যেতেন দোদেয়ার বনের গাছ ডাক বাক্সটির কাছে। বর্তমানে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন মার্টেনস। দীর্ঘ দুই যুগের কর্মজীবনে অন্তত ছয়টি মহাদেশের চিঠি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তার। এমন ভাষার চিঠিও তার হাতে পড়েছে যে ভাষা তার জানাও নেই। অনেক প্রেমের চিঠি, ছবি এখনো তাকে রোমাঞ্চিত করে।
ওক গাছটি কীভাবে ডাক বাক্স হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে সেই ইতিহাস সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৮৯০ সালে স্থানীয় একটি মেয়ে মিন্নার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তরুণ উইলহেলমের। তখনকার দিনে তাদের মধ্যে চিঠির আদান প্রদান করাটাও বেশ কঠিন ছিল। বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে যোগাযোগ ঠিক রাখার জন্য তরুণ প্রেমিক যুগল ওক গাছটিকে বেছে নেন। এক সময়ে তাদের সেই প্রেমের চিঠি আদান-প্রদানের বিষয়টি জেনে যান মিন্নার বাবা। গাছের গর্তের সেই ডাক বাক্সটির কথা অবশ্য মিন্নার বাবার কাছে বেশি দিন গোপন থাকেনি। মিন্নার বাবা বিষয়টি জানার পর তাদের প্রেমের বিষয়টি মেনে নেন। এরপর ১৯৯১ সালের ২ জুন ঐ গাছের শাখায় বসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মিন্না-উইলহেলম যুগল। তাদের সেই প্রেমের গল্প ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। এরপর থেকে নিজের মনের মানুষ খুঁজতে অনেক তরুণ-তরুণী বেছে নেন গাছটিকে। একপর্যায়ে ১৯২৭ সালে জার্মান ডাক বিভাগ ব্রাইডগ্রুম ওকটিকে নিবন্ধন করে। একটি পোস্ট কোডও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নিয়োগ দেয়া হয় একজন পোস্টম্যানও। জার্মানবাসীর কাছে ব্রাইডগ্রুম ওক গাছটি হয়ে ওঠে রোমান্টিক ডাক বাক্স।