ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

যে কারনে বিএনপি ও জামায়াতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল আরপিওর ২১ ধারা

২০২৫ নভেম্বর ০৩ ১৬:৫৪:১২

যে কারনে বিএনপি ও জামায়াতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল আরপিওর ২১ ধারা

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবের পর থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। এবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)–এর ২১ ধারার সংশোধনী নিয়ে দুই দলের অবস্থান আরও স্পষ্টভাবে মুখোমুখি হয়েছে।

রাজনৈতিক উত্তেজনার পটভূমি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিএনপি ও জামায়াতের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন সরব। সর্বশেষ আরপিওর ২১ ধারায় পরিবর্তন আনা হলে—যাতে জোটে অংশ নিলেও প্রার্থী নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করবে—এ নিয়ে মতবিরোধ চরমে পৌঁছেছে।

জামায়াত মনে করছে, সরকার বিএনপির চাপের মুখে পড়ে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়া সংশোধনী বাতিল করেছে। বিপরীতে বিএনপি দাবি করছে, জামায়াত নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়।

২১ ধারার মূল বিষয়

২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আরপিওর ২১ ধারার সংশোধনী অনুমোদিত হয়। সেই অনুযায়ী, জোটে অংশ নিলেও প্রতিটি দলকে নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হতো। কিন্তু ৩০ অক্টোবর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়—এখন জোটে অংশ নিলেও দলের প্রার্থীরা জোটের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।

এতে বিএনপি স্বস্তি পেলেও জামায়াত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সরকার-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এটি শুধু বিএনপির দাবির কারণে নয়; জোটের ছোট দলগুলোরও এ বিষয়ে অনুরোধ ছিল।

বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,“সরকার নিশ্চিত করেছে, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। আমরা এখন থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রমে মনোযোগী। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে বিএনপি প্রস্তুত।”

অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন,“বিএনপি ভেতরে ভেতরে আবার ফ্যাসিস্ট হওয়ার খায়েশ দেখাচ্ছে। যে কারণে আমরা যে সংস্কারের পথ খুলতে চেয়েছিলাম, তারা তা আটকে দিচ্ছে।”

জোট রাজনীতিতে প্রতীকের হিসাব

বিশ্লেষকেরা বলছেন, জোটের প্রার্থীরা যদি নিজ দলের প্রতীকে ভোট করে, তাহলে ছোট দলগুলো আসন ভাগাভাগিতে সুবিধা পেতে পারে। অন্যদিকে বিএনপির জন্য এই সিদ্ধান্ত ঝুঁকিপূর্ণ—কারণ ছোট দলগুলো ‘ধানের শীষ’ প্রতীকেই জয়ী হওয়ার ভরসা খোঁজে।

জামায়াতের যুক্তি, জোটে থেকেও নিজ দলের প্রতীকে লড়লে দলের পরিচয় ও প্রভাব বাড়ে। কিন্তু বিএনপির আশঙ্কা, এতে জোটের ঐক্য ভেঙে পড়বে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঝুঁকি বাড়বে।

ঐকমত্য কমিশন ও জুলাই সনদ বিতর্ক

২৮ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন “জুলাই সনদ” বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়। এতে সংবিধান সংস্কারের সময়সীমা, গণভোট ও সংসদীয় প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। বিএনপি চায়, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একদিনে হোক; জামায়াত চায় আগে।

দল দুটির এ ভিন্ন অবস্থান থেকেই এখন আরপিও ইস্যুতেও বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মত

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন,“রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গভীর অনৈক্য তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। জুলাই আন্দোলনে যারা ঐক্যবদ্ধ ছিল, এখন তাদেরই আবার মুখোমুখি দেখা যাচ্ছে।”

রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন একটাই—জোট রাজনীতির এই টানাপোড়েন কি নির্বাচনের পথে নতুন জটিলতা তৈরি করবে, নাকি শেষ মুহূর্তে সমঝোতার কোনো পথ খুঁজে পাবে বিএনপি ও জামায়াত?

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

বাবর আজমকে শাস্তি দিলো আইসিসি

বাবর আজমকে শাস্তি দিলো আইসিসি

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের তারকা ব্যাটার বাবর আজমকে আইসিসি ম্যাচ ফির ১০ শতাংশ জরিমানা করেছে। ম্যাচ চলাকালীন ক্ষোভে স্টাম্পে... বিস্তারিত