ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

এক ভরি সোনায় ৪০ হাজার টাকা বেশী, কেন বাংলাদেশে সোনার দাম আকাশছোঁয়া”

২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১৮:২২:৪৬

এক ভরি সোনায় ৪০ হাজার টাকা বেশী, কেন বাংলাদেশে সোনার দাম আকাশছোঁয়া”

বাংলাদেশে সোনার দাম এখন এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে যা কয়েক মাস আগেও কেউ ভাবতে পারেনি। এক সময় যে ভরি সোনা লাখ টাকায় মিলত, এখন তা দুই লাখের ঘর পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে — কেন একই মানের সোনা ভারত বা দুবাইয়ের তুলনায় বাংলাদেশে এত বেশি দামে বিক্রি হয়?

বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো দেশের বাজারে স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক সোনা আমদানির ব্যবস্থা না থাকা। সোনা এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, বরং বিদেশফেরত যাত্রীদের হাত ধরে ‘ব্যাগেজ রুলস’-এর মাধ্যমে আসে।

বাংলাদেশে সোনার বর্তমান দাম

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)-এর নির্ধারিত দরে বর্তমানে ভ্যাট ও মজুরি বাদে ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকায়। যদিও বৈশ্বিক বাজারে দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) থেকে নতুন দরে প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার টাকায়।

এর তুলনায়,

দুবাইয়ে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি: প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৪ টাকা

ভারতে: প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৩ টাকা

অর্থাৎ, দুবাইয়ের তুলনায় বাংলাদেশে প্রতি ভরিতে দাম বেশি ৪২ হাজার টাকারও বেশি, আর ভারতের চেয়ে বেশি ২১ হাজার টাকা।

কীভাবে দেশে সোনার দাম নির্ধারিত হয়?

দেশে সোনার দাম নির্ধারণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। তবে বাস্তবে এর মূল নিয়ন্ত্রণ থাকে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারকেন্দ্রিক পাইকারি বাজারে, যা পরিচালনা করে বাংলাদেশ পোদ্দার সমিতি।

প্রতিদিন বিকেল ৩টার দিকে পোদ্দার সমিতি সোনার দাম ঠিক করে। তারা বিবেচনায় নেয়—

আন্তর্জাতিক বাজারদর

কলকাতা ও দুবাইয়ের দাম

স্থানীয় বাজারে সোনার সরবরাহ (ব্যাগেজ রুলসে আসা সোনা ও পুরোনো অলংকার)

এরপর বাজুস তাদের “স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং”-এর মাধ্যমে পাইকারি দামের সঙ্গে নির্দিষ্ট মুনাফা যোগ করে খুচরা দামের তালিকা প্রকাশ করে।

আগে যেখানে পাইকারি দামের ১.২৫ গুণ করে দাম নির্ধারণ করা হতো, এখন সেই পদ্ধতি বদলে ভ্যাট ও তৈরির মজুরি আলাদা যোগ করা হয়।

কেন আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দাম বেশি?

বাংলাদেশে সোনা বৈধভাবে খুব কম আমদানি হয়। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ১০ ভরি সোনা আনতে পারেন, সেটিও নির্দিষ্ট শুল্ক দিয়ে। ফলে সোনার বাজারে অবৈধ আমদানি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্য একটি বড় ভূমিকা রাখে।

পোদ্দার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিনের ভাষায়,

“ব্যাগেজ রুলসে যারা সোনা আনেন, তারা মুনাফা রাখেন। তারপর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আলাদা লাভ যোগ করেন। এভাবেই ধাপে ধাপে দামের পার্থক্য তৈরি হয়।”

কতটা যৌক্তিক এই দাম?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করলেও, ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সোনা আমদানি কার্যত স্থবির হয়ে আছে। ফলে বাজার এখনো পুরোটাই ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,

“বাংলাদেশে সোনার দামের সঙ্গে বৈশ্বিক বাজারের সম্পর্ক দুর্বল। দাম নির্ধারণের ফর্মুলা প্রকাশ করা হয় না, যা প্রক্রিয়াটিকে অস্বচ্ছ করে তুলেছে।”

তিনি মনে করেন, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা উচিত।

২২ ক্যারেট সোনার দাম — বাংলাদেশ বনাম ভারত ও দুবাই (সারসংক্ষেপ)
বিষয়বাংলাদেশভারতদুবাই
২২ ক্যারেট ভরি সোনার দাম ২,০৯,০০০ টাকা (নতুন) ১,৯৬,০০০ টাকা ১,৭৫,০০০ টাকা
মূল্য পার্থক্য (বাংলাদেশের তুলনায়) +১৩,০০০ টাকা +৩৪,০০০ টাকা
দাম নির্ধারণ করে বাজুস ও পোদ্দার সমিতি জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন দুবাই গোল্ড গ্রুপ

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

বাবর আজমকে শাস্তি দিলো আইসিসি

বাবর আজমকে শাস্তি দিলো আইসিসি

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের তারকা ব্যাটার বাবর আজমকে আইসিসি ম্যাচ ফির ১০ শতাংশ জরিমানা করেছে। ম্যাচ চলাকালীন ক্ষোভে স্টাম্পে... বিস্তারিত