বিশ্বকাপে সাকিব রুবেলকে নিয়ে যেমন হবে বাংলাদেশ দল
অন্যদিকে সাকিবের অপূর্নতায় একাদশ সাজাতে গিয়ে রুবেলকে দলের বাহিরে রাখতে হচ্ছে টিম ম্যানেজম্যান্টকে। অলরাউন্ডার সাকিবের ঘাটতি পূরণের জন্য বোলিং অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিনের উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
কিন্তু রুবেল ও সাকিবের ঘাটতি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বেশ হারে হারেই টের পাচ্ছে টাইগার ক্রিকেট দল। টু ইন ওয়ান সাকিব আল হাসানের ১০ ওভার বোলিং ও ব্যাটিংয়ের বড় অভাব টের পাচ্ছে টাইগাররা।
অন্যদিকে টাইগারদের ব্যর্থতায় রুবেলের পেসকেও বেশ মিস করছে টাইগার সর্মথকরা। নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের মতো পেস সহায়ক উইকেটে রুবেলের গতি বেশ কাজে লাগাতে পারতো বাংলাদেশ দল এমনটাই মনে করছে তারা।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের কেবল ১টি ম্যাচ বাকি। ইতিমধ্যে প্রথম ২ ওয়ানডে হেরে সিরিজ হাতছাড়া করেছে টাইগাররা। প্রথম দুই ওয়ানডেতে একাদশে জায়গা না পাওয়া রুবেলকে শেষ ম্যাচে একাদশে দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে একাদশ থেকে বাদ পড়বেন কে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন!
সামনেই ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। মে মাসের শেষের দিকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের হাতে সময় আছে এখন কেবল ২-৩ মাস। এর মধ্যেই বিশ্বকাপ দল গোছাতে হবে টাইগারদের।
কিন্তু কিউইদের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই ভরাডুবির পর বিশ্বকাপে টাইগার একাদশ নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু প্রশ্ন। এমনিতেই দলের বাহিরে আছেন সাকিব অন্যদিকে বিপিএলে দূর্দান্ত পারফম করা রুবেলও জায়গা পাচ্ছেন না নিয়মিত একাদশে। এ দুজনের বাহিরেও রয়েছে আরেক দূর্ভাগা ওপেনার ইমরুল কায়েসের নাম। ওপেনিংয়ে লিটন, সৌম্যদের চেয়ে পরিসংখ্যান ও পারফম্যান্সের বিচারে এগিয়ে থেকেও দলে জায়গা হচ্ছে না তার।
এই সকল বিতর্ক ঠেলে দিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে রুবেল ও সাকিব নিয়মিত একাদশে ফিরলে টাইগারদের এই একাদশ থেকে বাদ পড়বেন কোন ২ জন?
একটু হিসেব মিলিয়ে দেখা যাক। ওপেনিংয়ে টাইগার একাদশে প্রথম পছন্দ তামিম ইকবাল। দেশসেরা এই ওপেনারের সঙ্গী হিসেবে অনেককেই ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখা হয়েছে। কিন্তু কেউই সফল হতে পারেননি।
দেশের মাটি কিংবা বাহিরের কন্ডিশন কোনো ক্ষেত্রেই ভালো করছেন না লিটন দাস। বরাবরেই ভক্তদের তার ব্যর্থ পারফম্যান্সে চরমভাবে হতাশ করছেন তিনি। লিটনকে পাশ কাটিয়ে ইমরুল কিছুটা আশানরুপ পারফম্যন্স করলেও পেস সহায়ক উইকেটে কিংবা বাহিরের দেশের কন্ডিশনে তামিমের সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে বরাবরই কোনো এক কারণে পিছিয়ে থাকেন ইমরুল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে প্রথম স্কোয়াড ঘোষনাতেও যা পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। একটা সময় বিসিবি সভাপতি পাপনের কথায় খানিকটা আশা তৈরি হলেও ইনজুরির কারণে সেই আশাটুকুও নিভে গেছে তার।
অন্যদিকে বর্তমানে তিন নম্বরে ব্যাটিং করছেন সৌম্য। কিউইদের বিপক্ষেও দুই ম্যাচে ভালো শুরুর পরও ফিরে গেছেন এই তারকা। সে হিসেবে সৌম্যর উপর আরো একটি সিরিজ ভরসা রাখবে টিম ম্যানেজম্যান্ট। এছাড়া পেস সহায়ক উইকেটে পেসারদের বিপক্ষে বরাবরই সৌম্যর রেকর্ড বেশ উজ্জল।
একাদশে সাকিব ফিরলে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে দেখা যেতে পারে সাকিবকে। সেক্ষেত্রে তামিমের সঙ্গে ফের ওপেনিংয়ে জুটি বাধতে পারেন সৌম্য সরকার। আর ফর্মহীন লিটন দাস ছিটকে যেতে পারেন একাদশে বাহিরে।
৪ নম্বর পজিশন বরাবরই মুশফিকের পছন্দের ব্যাটিং পজিশন। তাই মি. ডিপেন্ডবল থাকছেন তার নির্দিশ্টি চার নম্বর পজিশনেই।
৫ নম্বরে পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে কিউইদের বিপক্ষে বেশ আলো ছড়িয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। টাইগার দলপতি মাশরাফির বেশ আস্থা জুড়েও রয়েছে মিঠুনের নাম। বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পেস বোলারদের বিরুদ্ধে যারা ব্যাটিংয়ে বেশ স্বাছন্দ্য বোধ করেন মিঠুন তাদের মধ্যে একজন। ইতিমধ্যে নিউজিল্যান্ড সিরিজে দুই ফিফটি করে নিজের জায়গা একাদশে বেশ পাকাপোক্ত করেছেন মিঠুন।
৬ নম্বর পজিশনে থাকছেন সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার পরে ৭ নম্বরে চলে আসবে সাব্বির রহমানের নাম। বিতর্কিত এই ক্রিকেটারের একাদশে অন্তভূক্তি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও স্লোগ ওভারে সাব্বিরের বদলি হিসেবে তেমন ভালো কারো নাম নেই। সেক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নিজের লেগ স্পিন বোলিং দিয়েও একাদশে অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করতে পারেন সাব্বির।
৮ নম্বরে থাকবেন মিরাজ বা সাইফুদ্দিনের একজন। স্পিন সহায়ক পিচ হলে সাকিবের পাশাপাশি ২য় স্পিনার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখবেন মেহেদি মিরাজ। আর তার ব্যতিক্রম বা পেস সহায়ক উইকেট হলে সাইফুদ্দিনই থাকবেন মিরাজের পরিবর্তে। এ দুজনের আরো একটি ভালো দিক হচ্ছে দুজনই বোলিং অলরাউন্ডার।
৯. ১০ ও ১১ নম্বর পজিশনে যথাক্রমে চলে আসছে মাশরাফি, রুবেল ও মোস্তাফিজের নাম। এই তিনজনের সঙ্গী হিসেবে মিরাজ বা সাইফুদ্দিনের একজন, ৪ জন মূল বোলার ও অলরাউন্ডার সাকিবসহ পরিপূর্ণ বোলারই পাচ্ছে টাইগার এই একাদশে। অন্যদিকে অলরাউন্ডার হিসেবে মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও সৌম্যর বেশ কিছু ওভারও ভূমিকা রাখতে পারে দলের প্রয়োজনীয় মুহুর্তে।
যদিও বিশ্বকাপের এখনো বহু সময় বাকি। কিন্তু মে মাসের ২৪ তারিখে বিশ্বকাপের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামার আগেই একাদশ ও স্কোয়াড গুছিয়ে নিবে টাইগাররা। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে হয়তো মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই হবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা।
বিশ্বকাপের আগে মাঝখানের এই দুই মাসে কেবল আয়ারল্যান্ডের মাটিতেই একটি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগমূহুর্তে সিরিজে নিশ্চই নতুন কাউকে দলে অন্তভূক্তি করে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করবে না বিসিবি।
হয়তো এই একাদশের বাহিরে ইমরুল, তাসকিনদের একটু দেখে নিতে চাইবে বিসিবি। কিন্তু তাতে একাদশে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে এটা নয়। নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষেই দলের গ্রাফ গুছিয়ে নিবে কোচ। আর কিউইদের মাটিতে প্রথম দুই ওয়ানডে শেষে এখন অনেকটা পরিষ্কার পরবর্তী সিরিজে কেমন হতে চলেছে টাইগার একাদশ। কিংবা কেমন হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ একাদশ।