গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে নিযোগের এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যেখানে আবেদনের শেষ তারিখ দেওয়া হয় আজ ২৬ এপ্রিল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীদের মৌখিক, ব্যবহারিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য সম্মতি দেওয়া হচ্ছে।

নিযোগপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সেনা কল্যাণ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১২টার দিকে সেনা কল্যান ভবনের নিচতলায় একজন কর্মকর্তা প্রার্থীদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। ১৮ থেকে ২০ জন প্রার্থী সেখানে লাইন ধরে নিজের কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন। গণমাধ্যমের পরিচয় দিয়ে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঊর্ধ্বতন দু’জন সেনা কর্মকর্তার কাছে পাঠান। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তারা বলেন, আজ আমাদের আবেদনের শেষ তারিখ। এখন পরীক্ষা চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে আজই একটি তালিকা সৌদি আরবে পাঠানো হবে।

আবেদনের তারিখ বাড়ানো হবে কী না জানতে চাইলে তারা বলেন, আবেদনের তারিখ বাড়ানো হবে কী না? সে ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে যারা আবেদন করেছেন তাদের জন্য আমাদের এ নিয়োগ প্রক্রিয়া এপ্রিল শেষ পর্যন্ত চলবে। কারণ কুরিয়ার বা ডাকের মাধ্যমে যারা আবেদন করেছেন তাদের অনেকের আবেদন হয়তো এখনও পৌঁছায়নি। আমরা সে আবেদনগুলোর জন্য চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত সুযোগ রাখবো।

সেনা কল্যাণ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের সামনে দেখা হয় বাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা থেকে আসা চাকরিপ্রার্থী মো. জসিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ক্লিনার পদে আবেদন করেছি।গতকাল আমার স্বাস্থ্য ও মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে। আমি নির্বাচিত হয়েছি। আজ আমি এসেছি ৩৫ হাজার টাকার ব্যাংক ড্রাফট জমা দিতে। আগামী ১০ মে আমার ফ্লাইট বলে জানানো হয়েছে। আগামী ৬ মাসের জন্য আমাদেরকে সৌদি নেওয়া হচ্ছে। তবে সেখানে দীর্ঘসময় কাজ করার প্রত্যাশী তিনি।

একইভাবে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন কিশোরগঞ্জের কুশেনপুর থানার কুচিমারা গ্রামের জাকির হোসেন। তিনিও আবেদন করেছেন ক্লিনার পদে। গত রোববার তার মৌখিক, ব্যবহারিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। ওই দিনেই তিনি যোগ্য বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই দ্রুত তার পাসপোর্ট করাতে হবে। কিন্তু তার পাসপোর্ট পেতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। দেরিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য সে আজও পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছেন।তিনি বলেন, আমি গত ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দুবাই ছিলাম। সেখানে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজ করতাম। আবার এ সুযোগ পেয়ে আমি সৌদি আরবে যাচ্ছি।

পরীক্ষা কেন্দ্রে কিশোরগঞ্জের কুশেনপুর থেকে এসেছিলেন রিপন হোসেন। তিনি টাইলস হেলপার পদে আবেদন করেছেন। তার সব ধরণের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষায় তাকে নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। উর্দ্ধতনের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে- এ ধরণের প্রশ্ন করা হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর সাড়ে ১১ এর সিটি সেন্টারে। সেখানে তাকে পদ সংশ্লিষ্ট কাজ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল পাকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬০০ বাংলাদেশিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেবে সৌদি আরবের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান আল বাওয়ানি। আবেদন করা যাবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত।

রাজমিস্ত্রি (টাইল সেটার, ব্লক লেয়ার, প্লাস্টারার, মারবেল সেটার) পদে ৫৫ জন, রংমিস্ত্রি পদে ৬০ জন, জিপসাম ইনস্টলার (ড্রাইওয়াল ও সিলিং) পদে ২৫ জন, কার্পেন্টারি শপে ফিনিশিং কার্পেন্টার পদে ২০ জন, সাইটে কাজ করার জন্য কার্পেন্টার পদে ১০ জন, হেভি ডিউটি ড্রাইভার্স পদে ১০ জন, বিল্ডিং ইলেকট্রিশিয়ান পদে ১০ জন, স্টিল ফিক্সার ও রডমিস্ত্রি পদে ১০ জন, ওয়েল্ডার পদে ১০ জন, পাইপ ফিটার পদে ১০ জন, প্লাম্বার পদে ১০ জন, সাটারিং কার্পেন্টার পদে ১০ জন, ফ্লোর ভিনাইল ইনস্টলার পদে ১০ জন, নির্মাণ শ্রমিক পদে ২২০ জন এবং হেলপার বা ক্লিনার পদে ১৩০ জন শ্রমিক নেবে সৌদি আরবের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান আল বাওয়ানি কোম্পানি লিমিটেড। এসব শ্রমিক পাঠানো হবে সেনা কল্যাণ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের মাধ্যমে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন।