মঞ্জুর ফিক্সিং কাণ্ড ফাঁ`স! বিশ্বকাপে ফিক্সিং! জ‍্যোতির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন মা`র খাওয়া ক্রিকেটার

সম্প্রতি বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম জাতীয় দলের অভ্যন্তরীণ কিছু গুরুতর সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে যৌন হয়রানি এবং অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক টিম ম্যানেজার মনজুরুল ইসলাম মনজু, যার বিরুদ্ধে তিনি এবং দলের অন্যান্য নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ করেছেন। জাহানারা আলমের এই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের বর্তমান পরিবেশ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

মনজুরুল ইসলাম মনজুর বিরুদ্ধে অভিযোগ:জাহানারা আলম জানান, ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের সময় মনজুরুল ইসলাম মনজু নামে একজন সাবেক ক্রিকেটার এবং তখন দলের ম্যানেজার তার সঙ্গে একাধিকবার অপেশাদার ও অসঙ্গত আচরণ করেছেন। অনুশীলনের সময় বা হাত মেলানোর সময় মনজু তার কাঁধে হাত রাখতেন, বুকে টেনে নিতেন এবং কানের কাছে মুখ নিয়ে জানতে চাইতেন, "তোমার পিরিয়ডের আজ কয়দিন চলতেছে?" একবার জাহানারা "পাঁচ দিন" বলার পর মনজু বলেন, "এতদিন পিরিয়ড থাকে নাকি? মানুষের তো তিন-চার দিনে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। আমার দিকটাও তো দেখতে হবে তোর। পিরিয়ড শেষ হলে আমার কাছে চলে আসিস।"

এছাড়াও, মনজুরুল ইসলাম মনজুর বিরুদ্ধে নারী ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত পিরিয়ড চক্রের তথ্য ব্যবহার করে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। জাহানারা আলম উল্লেখ করেন যে, প্রতিটি আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেট দল খেলোয়াড়দের মাসিক চক্রের তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি অ্যাপ ব্যবহার করে, যা ফিজিওথেরাপিস্ট বা ডাক্তাররা সংগ্রহ করেন। কিন্তু মনজু এই ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে তাকে হয়রানি করতেন।

আসিফা আশরাফী পাপিয়া নামে অন্য একজন নারী ক্রিকেটারও মনজুর অপেশাদার আচরণ এবং ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, মারুফা নামে এক পেসার অনুশীলনে একটি ক্যাচ মিস করার পর মনজু তাকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করেন এবং মাঠ থেকে বের করে দেন।

দলের ভেতরের ক্ষমতার অপব্যবহার:জাহানারা আলম জানান যে, মনজুরুল ইসলাম মনজু টিম ম্যানেজার হিসেবে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে নারী ক্রিকেটারদের নানাভাবে হয়রানি করতেন। তিনি ক্রিকেটারদের বাদ দেওয়া বা অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা ব্যবহার করে তাদের সঙ্গে নিজের পছন্দমতো আচরণ করতেন। মনজু দিনের ভাতা হিসেবে নারী ক্রিকেটারদের জন্য নির্ধারিত ৪২ ডলারের বিলের জায়গায় ৬০-৭৫ ডলার বিল নিতেন। এছাড়া, তিনি নিজের পকেট ভরতে খেলোয়াড়দের গ্রুপ করে বাদ দিতেন বা পছন্দের ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, মনজু কোনো ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নন। তিনি কখনও ফার্স্ট ডিভিশন বা প্রিমিয়ার লিগে খেলেননি এবং তার কোনো ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা নেই। অথচ তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেছেন।

বিসিবি'র ভূমিকা ও প্রতিকার:জাহানারা আলম জানান, এই ঘটনার পর সোহেলী আক্তার নামে জাতীয় দলের একজন সাবেক খেলোয়াড় লতা নামে অন্য একজন নারী ক্রিকেটারকে মনজুর বিষয়ে সতর্ক করেন। লতা মনজুর ভয়েস নোটগুলো সংগ্রহ করে অন্য কারো কাছে পাঠিয়ে দেন। তবে, লতা তখন মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত ছিলেন যে, তিনি কী করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না।

জাহানারা আলমের দাবি, তিনি এবং লতা দুজনেই মনজুর অপেশাদার আচরণের বিষয়ে বিসিবির কাছে অভিযোগ করেছেন। জাহানারা প্রথমে মনজুকে বিষয়টি জানানোর পর মনজু তাকে হুমকি দেন এবং আইসিসি অ্যান্টি করাপশন ইউনিট (আইসিসি) কে না জানাতে বলেন। এরপর জাহানারা দলের হেড কোচ হাসানুজ্জামান টিটুকে বিষয়টি জানান। টিটুও তাকে অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে জানানোর পরামর্শ দেন। পরে জাহানারা আলম বিসিবির কাছে মনজুর অপেশাদার আচরণের বিস্তারিত অভিযোগ করেন।

এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা এবং নারী ক্রিকেটারদের সুরক্ষার বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।