করোনা : ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এমন মহামারীর সময়ে আমাদের করণীয় কি

সতর্কতামূলক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা : মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করে। এ কারণে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো’ (সুরা আননিসা : ৭১)। হাদিসে শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার ওপর তোমার শরীরেরও অধিকার রয়েছে’ (বোখারি, হাদিস নং-১৯৬৮)।
আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়া : কেননা আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো বিপদই আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যা আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করেছেন, তা ছাড়া কোনো কিছুই আমাদের স্পর্শ করবে না; তিনিই আমাদের অভিভাবক। আল্লাহর ওপরই মুমিনদের নির্ভরশীল হওয়া উচিত’ (সুরা আততাওবা, ৫১)।
লকডাউন : যে এলাকায় মহামারী আক্রান্ত হয়, সে এলাকার প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ করে দেওয়া। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যদি তোমরা শুনতে পাও কোনো জনপদে প্লেগ বা অনুরূপ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, তবে তোমরা তথায় গমন করবে না। আর যদি তোমরা যে জনপদে অবস্থান করছ সেখানে তার প্রাদুর্ভাব ঘটে, তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না’ (বোখারি, হাদিস নং-৫৩৯৬)।
আইসোলেশন (ওংড়ষধঃরড়হ) : মহামারী রোধে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পৃথক রাখাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় আইসোলেশন বলা হয়। মহানবী (সা.) এ সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন, ‘অসুস্থকে সুস্থের কাছে নেওয়া হবে না’ (বোখারি, ৫৭৭১ ও মুসলিম, ২২২১)।
হোম কোয়ারেন্টাইন (ছঁধৎধহঃরহব) : সুস্থ ব্যক্তি মহামারীতে আক্রান্তের আশঙ্কায় জনবিচ্ছিন্ন থাকাকে কোয়ারেন্টাইন বলা হয়। বিভিন্ন হাদিসে এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দা যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে ধৈর্যসহকারে, সওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস বুকে নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তাকদিরে যা চূড়ান্ত রেখেছেন তার বাইরে কোনো কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তা হলে তার জন্য রয়েছে শহীদের সমান সওয়াব’ (বোখারি, ৩৪৭৪ ও মুসনাদে আহমাদ, ২৬১৩৯)।
মুসাফাহা ও কোলাকুলি এড়িয়ে চলা : কেননা এর মাধ্যমে সংক্রমণের ভয় থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাকিফের প্রতিনিধি দলের মধ্যকার কুষ্ঠ রোগীকে হাতে হাতে বাইয়াত না দিয়ে লোক মারফত বলে পাঠান, ‘তুমি ফিরে যাও। আমি তোমার বাইআত নিয়ে নিয়েছি’ (মুসলিম, ২২৩১)।
সার্বিক পরিচ্ছন্ন থাকা : কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে মুমিনদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন’ (সুরা আল-বাকারা, ২২২)। হাদিসে পবিত্রতাকে ইমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। শরিয়তের বিভিন্ন বিধানকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম নির্ধারণ করা হয়েছেÑ ওজুর মাধ্যমে মানুষের শরীরের অনাবৃত্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা হয়, মেসওয়াকের মাধ্যমে মুখের সব ধরনের জীবাণু ধ্বংস হয়, সামগ্রিকভাবে সর্বক্ষণ ও বিশেষত সালাতে পরিধেয় কাপড় পরিচ্ছন্ন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার কাপড় পরিষ্কার রাখো’ (আল-মুদ্দাচ্ছির, ৪)।
গুজবে কান না দেওয়া ও গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা : ইসলামে যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো অসমর্থিত ব্যক্তি কোনো খবর দিলে তোমরা তা যাচাই করো’ (সুরা আল-হুজুরাত : ৬)। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যাচাই না করে শোনা খবর বিশ্বাস করা মিথ্যুক হওয়ার নামন্তর’ (মুসলিম, ৫)।
ঘরে নামাজ আদায় করা : আপৎকালীন অবস্থায় মহানবী (সা.) সাহাবিদের বাড়িতে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেন। তিনি মুয়াজ্জিনকে আজানের মধ্যে বলতে বলেন, ‘আলা সাল্লু ফি রিহালিকুম (তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে নামাজ আদায় করো)’ (বোখারি ৬৬৬, মুসলিম ৬৯৭)। তার ইন্তেকালের পর সাহাবিরাও একইভাবে আমল করতেন। সহিহ বোখারিতে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে এর প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মুয়াজ্জিনকে নির্দেশ দেন আজানে ‘সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম (তোমরা বাড়িতে সালাত আদায় করো)’ অংশটি যোগ করার জন্য (বোখারি ৬৬৮, মুসলিম ৬৯৯)। ইসলামি শরিয়াহর উদ্দেশ্য ও মহামারীর গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় মিসর, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফিকহ কমিটি ও ইসলামি ফাউন্ডেশন মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসার পক্ষে মত দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সবাইকে ঘরে ইবাদাত করার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গরিব-অসহায় ও নিম্ন আয়ের লোকদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা : করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘোষিত লকডাউনের এ দিনগুলোয় গরিব-অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা বৃত্তবানদের ওপর আবশ্যক। এ মহৎ গুণের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, ‘খাদ্য দান করো দুর্ভিক্ষের দিনে। এতিম আত্মীয়স্বজনকে অথবা নিঃস্ব মিসকিনকে’ (সুরা আল-বালাদ, ১৪-১৬)।
ভাইরাস প্রতিরোধে ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা : ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম সরকার জনকল্যাণ বিবেচনায় কোনো নির্দেশনা দিলে এবং তা শরিয়াহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে তা মান্য করা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসুলের ও তোমাদের নেতৃস্থানীয়দের’ (সুরা আন-নিসা, ৫৯)।
এ কঠিন সময়ে আমাদের উচিত বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার, নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, শাবান মাসের নফল রোজা, তাহাজ্জুদ নামাজ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর দুরুদ পাঠ করা।
ড. মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন তালুকদার : অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য, শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং খতিব, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জামে মসজিদ
- আজ হঠাৎ পাল্টে গেলো ডিমের দাম
- ব্যাপক হারে কমলো ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম
- কয়েক মিনিটের কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড পুরো জেলা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে
- বিসিবির ২৫০ কোটি টাকার গোপন চাল! কোথায় গেল এত টাকা, জানলে চমকে যাবেন
- বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চালু
- বড় সুখবর দেশি পেঁয়াজের দাম নিয়ে
- ব্রেকিং নিউজ : ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতার
- প্রবাসীদের ভিসার জরিমানা ৫০ হাজার রিয়াল, সাথে ৬ মাসের জেলও
- ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাস্যকর কান্ড, নিজেরাই ধংস করলো নিজের এলাকা
- মেয়েদের ইচ্ছা সপ্তাহের কোন দিনে সবচেয়ে তীব্র হয়, জেনে নিন চমকপ্রদ তথ্য
- তবে কী ৫ লাখ ছাড়াবে স্বর্ণের দাম, যে ভবিষ্যদ্বাণী
- টানা ৩ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
- ভারতের ঘুম হারাম করে ছাড়লো ড. ইউনূস
- ৩ দিন বৃষ্টি হতে পারে যে ৬ বিভাগে
- আজকের সকল দেশের টাকার রেট (২৬ এপ্রিল ২০২৫)