দেশে ফেরত প্রবাসীদের নিয়ে পাওয়া নতুন খবর

জরিপ নিয়ে সম্প্রতি আইওএমর প্রকাশিত ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টারনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয় একেকজন অভিবাসী গড়ে তার পরিবারের তিনজন সদস্যকে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। করোনাভাইরাসের কারণে উপার্জন ব্যবস্থা, সামাজিক সেবা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তার অভাবে হাজারো অভিবাসী কর্মী প্রবাসে যে দেশে কাজ করছিলেন, সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
দেশের উচ্চ অভিবাসন প্রবণ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় তিন লাখ মানুষ ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকেন। এসব প্রবাসীদের আয়েই চলে তাদের পরিবার। এ জেলার তিনটি উপজেলার সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত রয়েছে।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার দেয়া তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৩ হাজার ৩৭ জন প্রবাসী এসেছেন। এদের অনেকেই বিদেশে চাকরি হারিয়ে একেবারে দেশে চলে এসেছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশেও কোনো কাজ পাচ্ছেন না তারা। অথচ করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর আগেও এসব প্রবাসীরাই গড়ে ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেছেন।
দেশে আসা অধিকাংশ প্রবাসী করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। জীবিকার উৎসটুকু হারিয়ে চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে তাদের অনেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন। ফলে কর্মহীনতা আর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে প্রবাস ফেরতদের।
আরব আমিরাত ফেরত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল গ্রামের ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সাত সদস্যের পুরো পরিবারটা আমার উপর নির্ভরশীল। করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশের চাকরিটা হারিয়েছি। দেশে কিছু একটা করার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। টাকা-পয়সাও নেই যে কোনো ব্যবসা করব। সংসারের খরচ যোগানোর জন্য নিজের স্মার্টফোনটা পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছি।’
ফারুক জানান, একটি প্রসাধনীর দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করে মাসে ৫০ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতেন। গত নভেম্বরে তিন মাসের ছুটিতে আসেন তিনি। গত ১৯ মার্চ ফিরতি ফ্লাইট থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে আর যাওয়া হয়নি। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসে দুবাই থেকে দোকান মালিক ফোন করে জানান, ব্যবসা মন্দা হওয়ায় তিনিসহ আরও কয়েকজন সেলসম্যানকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। জীবিকার এই একমাত্র উৎস হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ফারুক।
আরেক রেমিট্যান্স যোদ্ধা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উজেলার চারপাড়া এলাকার সোহেল রানা জানান, তিনি ওমানের মাস্কাট শহরে একটি বাসায় কাজ করতেন। তার নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ মিটিয়ে বাড়িতে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা পাঠাতেন। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে এক মাসের ছুটি নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে দেশে আসেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সাত মাসেও ওমানে যেতে না পারায় তার ইকামার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে।
‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় সাংসার চালাতে কিছুদিন রাজমিস্ত্রির কাজ করার পর ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছিলাম। কিন্তু কাপড়ের ব্যবসা মন্দা হওয়ায় ঈদের পর মালিক চাকরি ছাড়িয়ে দিয়েছেন। টাকার অভাবে বিয়ের উপযুক্ত বোনকেও বিয়ে দিতে পারছি না। মায়ের চিকিৎসা খরচসহ সবমিলিয়ে এখন ১০-১২ লাখ টাকা ঋণ আছে। কীভাবে এই ঋণ শোধ করব জানি না। এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যে কারও কাছে হাত পেতে কিছু নিতেও পারছি না’ আক্ষেপ করে বলেন সোহেল।
সৌদি আরব ফেরত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মো. আকতারুল ইসলাম জানান, ১১ বছর সৌদি আরব ছিলেন তিনি। সেখানে দুই ভাইয়ের সঙ্গে ফার্নিচারের ব্যবসা করতেন। তিন ভাইয়ের আয়ে তাদের যৌথপরিবার ভালোভাবেই চলছিল। চার মাসের ছুটি শেষে মার্চ মাসে সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশেই আটকা পড়ে আছেন। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে তার ভিসার মেয়াদও ফুরিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, তার ছোট ছোট তিনটি ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আছেন। সৌদিআরবে ভালো রোজগার করায় ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো পরিকল্পনাও ছিল না। এর ফলে হঠাৎ করে অর্থকষ্টে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন আকতারুল। সৌদি আরব গিয়ে রোজগার করে শোধ করে দেবেন এ কথা ভেবে চড়া সুদে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। এখন সেই ঋণের সুদ বাড়ছে, কিন্তু তা শোধ দেয়ার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।
করোনাভাইরাসের মহামারির এই সময়ে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি বিশিষ্টজনদের। প্রবাসফেরত কল্যাণ সমিতিও আর্থিক সহায়তা দিয়ে প্রবাসীদের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রবাসফেরত কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি শফিকুল আলম স্বপন বলেন, প্রবাসফেরতরা চরম অর্থকষ্টে আছেন। অর্থের অভাবে দেশেও কোনো কিছু করতে পারছেন না। সংসার চালাতে গিয়ে অনেকই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রবাসফেরতদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সরকারি অর্থসহায়তা প্রয়োজন।
জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কারণেই দেশের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তাদের অনেকেই আজ অসহায়। দেশেও কোনো কাজকর্ম নেই, আবার বিদেশেও যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় প্রবাসফেরতদের জন্য সুদমুক্ত বিশেষ ঋণ দিয়ে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিলে হয়ত তারা পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন জানান, যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে বেকার হয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য চার শতাংশ সুদে এসএমআই ও কৃষি ঋণ দেওয়া হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোতে প্রবাসী ডেস্কও খোলা হয়েছে। যারা আমাদের সঙ্গে কিংবা ইউএনওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের অসুবিধার কথা জানাবেন তাদেরকে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
- কোমরের নিচে এইরকম টোল সাদৃশ্য চিহ্ন রয়েছে? তাহলে যা ঘটবে আপনার সঙ্গে
- সাড়া জাগানো ১০ ভারতীয় ওয়েব সিরিজ, যা একবার হলেও দেখা উচিত
- মেয়েদের শারীরিক চাহিদা কত বছর বয়স পর্যন্ত থাকে, জানলে অবাক হবেন আপনিও
- পদত্যাগ করা নিয়ে যে ঘোষণা দিলেন ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী
- বিএনপি ও জামায়াতকে যা বললো প্রধান উপদেষ্টার
- কী হয়েছে ওবায়দুল কাদেরের
- ড. ইউনূস কি পদত্যাগ করতে চান
- ড. ইউনূসের কারনে ঢাকায় আসার ঘোষণা দিলেন পিনাকী-ইলিয়াস ও কনক সারোয়ার
- উত্তেজনাপূর্ণ ওয়েব সিরিজে মুগ্ধ দর্শকরা, না দেখলে মিস করবেন
- কার কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব
- ‘প্রকৃতির ডাকে’ সাড়া দিতে গিয়ে কেলেঙ্কারিতে জড়ালেন ট্রেনচালক! রেলের নিয়মে তোলপাড়
- বাড়লো আজকের মালয়েশিয়ান রিংগিত রেট (২৩ মে ২০২৫)
- আফসোস করে যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
- গর্ভাবস্থায় এই ৭টি খাবার খেলে শিশুর গায়ের রং হবে ফর্সা? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
- সারজিস আলমকে লিগ্যাল নোটিশ