যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন? তাহলে এখনই থমকে যান! কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সাময়িকভাবে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিসা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, এই দুই ধরনের ভিসা আবেদনকারীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত স্ক্রুটিনির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

বুধবার (২৮ মে) বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিশ্বের সব মার্কিন দূতাবাসকে নির্দেশনা দিয়েছেন নতুন করে কোনো শিক্ষার্থী ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট না দিতে। এই সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

আরও কঠোর হচ্ছে যাচাই প্রক্রিয়ানতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামভিত্তিক ভিসার ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট স্ক্যান করে যাচাই-বাছাই করা হবে। এর ফলে ভিসা প্রক্রিয়া যেমন দীর্ঘ হবে, তেমনি অনেকের জন্য এটি ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্ষতির মুখেযুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় একটি অংশেই বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীই বিদেশি। ফলে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও গবেষণামূলক কাঠামো বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে।

রাজনীতি বনাম শিক্ষা?বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত শুধু নিরাপত্তাজনিত নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও। হোয়াইট হাউসের ভাষ্যমতে, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদিবিদ্বেষ ছড়ানো, বৈষম্যমূলক ভর্তি নীতি অনুসরণ ও অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের মতো কাজ করছে। এইসব অভিযোগের ভিত্তিতেই ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হতাশাবিশ্বের হাজারো শিক্ষার্থী যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার আবেদন করতে যাচ্ছিলেন বা অপেক্ষায় ছিলেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। অনেকেই ইতিমধ্যে প্রস্তুতির পেছনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এখন এই অনিশ্চয়তা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে।

নিরাপত্তার অজুহাতে নতুন যুগের সূচনা?মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন,

“আমরা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাকে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি, তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি।”

কিন্তু শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের কড়াকড়ি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শিক্ষার বিশ্বনেতা’ হিসেবে যে অবস্থানে ছিল, তা হারিয়ে ফেলতে পারে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ হারাবে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

এখন অপেক্ষা—এই ভিসা স্থগিতাদেশ কতদিন বলবৎ থাকে এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আনে কি না!