যে কারণে এখনো থামছে না পোশাক খাতের অ-স-ন্তো-ষ

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বস্ত্র খাতে শ্রমিকদের অসন্তোষ তীব্র হয়। সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও কারখানার পরিবেশ স্বাভাবিক নয়।
তবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে কিছু কারখানার মালিকের অনুপস্থিতির সাথে অপরিশোধিত মজুরি, মিথ্যা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রও শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা।
অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে যে টেক্সটাইল শিল্পে এই অস্থিতিশীলতার কারণে সম্ভাব্য ক্রয় আদেশের ১০-১৫ শতাংশ ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। কিছু দেশ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা; শ্রমিকরা কারখানায় হামলা চালাচ্ছে।
১৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণী ও গোষ্ঠী নানা দাবি নিয়ে এগিয়ে আসে। গার্মেন্টস ও ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও বিভিন্ন দাবিতে ১০ দিনের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করেছে। এই প্রতিবাদ এখনও চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। সরকারের পক্ষে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়। এরপর যৌথ অভিযানও শুরু হয়। তবে এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। প্রতিদিনই কারখানা বন্ধ থাকছে।
কারখানার মজুরি প্রদানছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস, আগস্টের বেতন, নিয়মিত টিফিন বিল, নতুন শ্রমিক নিয়োগের দাবি নিয়ে শুরু হয় শ্রমিক আন্দোলন।
শ্রমিকদের পুরনো দাবি আলোচনার ভিত্তিতে পূরণ হবে- মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএ নেতাদের পরামর্শে শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন। কিন্তু আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধে বিলম্ব ও জালিয়াতি রোধ নিয়ে গাজীপুর ও সাওয়ারের কারখানায় আবারও বিরোধ দেখা দিয়েছে।
টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তারা আগস্টের বেতন পরিশোধের জন্য 'নরম ঋণ' চেয়েছিলেন, বলেছেন যে মজুরি সমস্যা সমাধানের জন্য কারফিউ জুলাই মাসে উৎপাদন ব্যাহত করেছে। চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিতেও নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিজিএমইএ জানায়, প্রায় ৯৭ শতাংশ কারখানাই বেতন পরিশোধ করেছে।
বিজিএমইএ বিজিএমইএর সদস্য, যা দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ এবং এই খাতে ৪ মিলিয়ন লোক নিয়োগ করে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নিটওয়্যার ও সোয়েটার এবং বাকি ৬০ শতাংশ ওভেন খাতের।
বিজিএমইএ সোমবার জানিয়েছে যে আগস্ট মাসের জন্য ২,৮০০ বা ৯৭ শতাংশ কারখানাকে অর্থ প্রদান করা হয়েছে। ২০৯৫টি কারখানা খোলা রয়েছে। বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৪৯টি।
অপরদিকে, আশুলিয়ার পুলিশ সুপার শিল্প পুলিশ-১ মো. সারওয়ার আলম সামজিককে বলেন, আশুলিয়া শিল্প এলাকায় ১৩(১) ধারায় সোমবার ৪৩টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বকেয়া বেতন নিয়ে কর্মচারীদের অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।ঝুট ব্যবসায় হাতবদল।
পোশাক খাতের ‘লোভনীয়’ ব্যবসা হিসেবে পরিচিত ঝুট ব্যবসারও হাতবদল হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের পরে আওয়ামী লীগের হাত থেকে ব্যবসা বিএনপি সমর্থক পরিচয়ে দখলের নেওয়ার চেষ্টা দেখছেন পোশাক মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা। এমন অভিযোগ পেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, যেসব এলাকায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ বদল হয়নি, সেখানেই শ্রম অসন্তোষ বেশি হচ্ছে।
‘হঠাৎ রাজনীতি বদলে গেছে। আগে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু এখন বিএনপি নেতারা এটি দখলে নিতে চায়। তারাই শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে বিশৃঙ্খলা করছেন বলে মনে করেন স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ‘পোশাক খাতে অস্থিরতার পেছনে বহিরাগতদেরও হাত রয়েছে। তারা টাকার বিনিময়ে শ্রমিক সেজে পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন। ঝুট ব্যবসার হাতবদল নিয়েও আন্দোলনরত শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার অভিযোগ আছে।’
কারখানায় আসছেন না উদ্যোক্তরা বেতনের দাবিতে শুরুর দিকে কোনো আন্দোলন না হলেও বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করেন বেক্সিমকো গ্রুপের প্রায় ৭৫ হাজার কর্মী। এ অবস্থায় কর্মীদের বেতন দিতে ৭৯ কোটি টাকার ঋণ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর বেক্সিমকো গ্রুপের কর্মীরা আন্দোলন থেকে সরে যান।
তবে গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোনাবাড়ী জোন) সুবীর কুমার সাহা বলেন, বর্তমানে বকেয়া বেতন ভাতার জন্যই বেশি শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক কারখানার মালিক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কিংবা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। ওইসব কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ থামানো যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের মতো কঠোরও হতে পারছে না পুলিশ। শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে কঠোর হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে কেউ মারা গেলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একটা লিমিটেশন তৈরি হয়ে গেছে। ফলে অসন্তোষ চলছে।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী মনে করছেন, উদ্যোক্তাদের একটি অংশ কারখানা এলাকায় যাচ্ছেন না নিরাপত্তার অভাব ও ‘ভয়ের’ কারণে। পুলিশ না থাকায় উচ্ছৃঙ্খল যুবক, শ্রমিকরা ভাঙচুর করছে। তারা অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে না, তারা জানে পুলিশ কম। কে গ্রেপ্তার করবে? নিরাপদ মনে করছেন না অনেক মালিক। তাই অফিস চালাচ্ছেন দূর থেকে। কিছু লোকের তো রাজনৈতিক সমস্যা আছে, সেটা আলাদা ইস্যু।
‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতার পেছনে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেছেন, ‘পোশাক শিল্পে অসন্তোষের পেছনে এই শিল্পের ভেতরের কেউ খেলছে কী না, তা চিহ্নিত করতে হবে। তৃতীয় পক্ষ (বিদেশি) কাজ করছে কী না, তা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জানতে কাজ করছে।’
সম্প্রতি যৌথ বাহিনীর অভিযানে থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাফপ্যান্ট’ পার্টি বলে একটি গ্রুপ আছে। যৌথ অভিযানও হয়েছে। তাদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তারা কিছুটা নিউট্রালাইজ হয়েছে। থার্ড পার্টি; তারাতো সিনে আসছে না। তারা উসকানি দিয়ে কেটে পড়ে।’
শ্রমিক অসন্তাষের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে কী না- এমন প্রশ্নে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সম্প্রতি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে এমন কিছু তথ্য পেয়েছি; যেটা ওই বিষয়টিই ইঙ্গিত করে। এটা একটি সিজনাল বিজনেস। মার্কেটে যে প্রোডাক্টটা যাবে সেটা তিনমাস আগেই প্রস্তুত করতে হয়। সেই অর্ডারগুলো অনেক জায়গায় বাতিল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১৫-২০ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু নির্দিষ্ট দেশের বায়াররা অর্ডারটা নেওয়ার জন্য লবি করছেন, উঠে পড়ে লেগেছে।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে শ্রমিক নামধারী কিছু দুর্বৃত্তরা কাজ করছে। এছাড়া সাবেক সরকারের অনুসারীদেরও হাত আছে।’
বিজিএমএইএর নিষ্ক্রিয়তাঅন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্বে আসা খন্দকার রফিকুল ইসলাম শ্রম অসন্তোষ চলার মধ্যেই পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। পরে তারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ, সেনাবাহিনী, কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে উত্তরা কার্যালয়ে উন্মুক্ত বৈঠক করেছেন বিজিএমইএ নেতারা। তারপর নিরাপত্তার পরিধি বাড়িয়ে কারখানা খোলা হলেও অস্থিরতা কাটেনি বেতন নিয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ফের বৈঠক ডেকেছেন তারা। তারপরও কমেনি শ্রমিক অসন্তোষ। একটু কমলেও আবার শুরু হয়।
- সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন যত টাকা বেতন বাড়লো সরকারি চাকরিজীবীদের
- প্রবাসীদের পাসপোর্ট-সহ সবকিছু পুড়ে ছাই
- দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস
- চরম দু:সংবাদ : নিষিদ্ধ হলেন টাইগার ক্রিকেটার
- ভারত পাকিস্থান সংঘাত : ড. ইউনুসের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ
- প্রবাসীরা সাবধান : জরিমানা ৫০ হাজার রিয়াল, সাথে ৬ মাসের জেলও
- তবে কী ৫ লাখ ছাড়াবে স্বর্ণের দাম, যে ভবিষ্যদ্বাণী
- যে সিদ্ধান্তের কারনে এবার বেকায়দায় ভারত
- চরম দু:সংবাদ : কপাল পুড়লো কয়েক হাজার প্রবাসীর
- বড় সুখবর পেলেন পিনাকী ভট্টাচার্য
- বিয়ের রাতেই শরীরের খেলা,ভাইরাল ভিডিও
- আইপিএলে সাকিব: ২০ লাখ রুপি দিয়ে কিনতে চাইছে যে দল
- নতুন বিধিমালা প্রকাশ করলো সৌদি
- কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক, আলোচনা হলো যেসব বিষয়ে
- পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রস্তুতি, ভারতীয় সেনার মাস্টারপ্ল্যান