| ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

পেটে লাথি মেরেছে ওরা, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়

জাতীয় ডেস্ক . স্পোর্টস আওয়ার ২৪
২০১৯ অক্টোবর ২৪ ১৭:৩৮:২৪
পেটে লাথি মেরেছে ওরা, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়

হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের কাছে এমন একটি চিঠি লেখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন।

এই চিঠিতে লিখে যাওয়া অসিয়ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অফ অনার) ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনকে দাফন করা হয়েছে।

এ অবস্থায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের শেষ বিদায়ের সময় বাজেনি বিদায়ের সুর। জানাজার পূর্ব মুহূর্তে ম্যাজিস্ট্রেট মহসীন উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনের চৌকশদল গার্ড অব অনার জানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনের মরদেহ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করা হয়নি।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের যোগীবাড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন পিতৃস্নেহে চিঠিতে যা লিখে গেছেন, তার মূল কথা হলো জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সুপারিশে ছেলে নুর ইসলামের নো ওয়ার্ক নো পে ভিত্তিতে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি পান।

জানা যায়, নুর ইসলাম সদর এসিল্যান্ডের গাড়ি চালাতেন। কর্মস্থলে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হুইপ ইকবালুর রহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বিষয়টি দেখবেন বলে সেখানে উপস্থিত এডিসি রাজস্বকে বিষয়টি দেখতে বলেন হুইপ।

হুইপকে বিষয়টি আবগত করায় প্রশাসন থেকে প্রথমে নুর ইসলামকে তার বসবাসরত খাস পরিত্যক্ত বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে নুর ইসলামকে বাথরুম পরিষ্কার ও মাংস রান্না করতে বলেন এসিল্যান্ডের স্ত্রী। মাংস রান্না ঠিক না হওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়।

পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়াকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে জেলা প্রশাসকও ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তখন নুর ইসলাম তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে মাফ চাওয়ার জন্য এসিল্যান্ডের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও দেখা করতে পারেনি। চাকরি চলে যাওয়ায় নিরুপায় হয়ে হুইপ ইকবালুর রহিমের সঙ্গে দেখা করেন তারা। কিন্তু প্রশাসন সেটি চরম নেগেটিভভাবে নেয়। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নুর ইসলাম চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নুর ইসলাম।

ছেলের বিষয়টি হুইপকে জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন চিঠিতে লিখেছেন, ‘জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে করা স্বাধীন দেশে আমার ছেলের রুজি রোজগারটুকু অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া হলো। গত ২১ অক্টোবর থেকে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ২নং ওয়ার্ডের ৪৪নং বেডে চিকিৎসাধীন আছি আমি। এ অবস্থায় এই পত্রটি তোমার কাছে লিখছি। তোমার কাছে আমার আকুল আবেদন তুমি ন্যায় বিচার করো।’

মুক্তিযোদ্ধা লিখেছেন, ‘ঠুনকো অজুহাতে আমার ছেলেটিকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করো। আমার বয়স প্রায় ৮০ বছরের কাছাকাছি। ছেলেটি হটাৎ চাকরিচ্যুত হওয়ায় একে তো আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ তারপর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম-স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাই না।’

২২ অক্টোবর নিজের লেখা চিঠিটিতে স্বাক্ষর করে ডাকযোগে ঢাকায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের কাছে এ চিঠি পাঠিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন। পরের দিন ২৩ অক্টোবর বেলা ১১টার সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের যোগীবাড়ি গ্রামে মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনের জানাজা নামাজ শুরুর পূর্ব মুহূর্তে ম্যাজিস্ট্রেট মহসীন উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনের একটি চৌকশদল গার্ড অব অনার প্রদান করার জন্য যান।

এ সময় স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা জানায় জীবণ মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লিখে যাওয়া চিঠির অসিয়ত অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন বা গার্ড অব অনার প্রদান করতে দেবেন না। তাদের ভাষায় এটাই হবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ইসমাইল হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

জানাজার আগে মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনের পরিবার-পরিজনের পক্ষে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন দুলাল উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, অন্যায়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের ছেলেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকেই এই চিঠি লিখে গেছেন তিনি। আমরা তার লিখে যাওয়া চিঠির অসিয়ত অনুযায়ী দাফন করতে চাই। চিকিৎসার জন্য অনেকের কাছে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তা পাননি তিনি।

গার্ড অব অনার প্রদান করতে যাওয়া ম্যাজিস্ট্রেটকে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেরা বলেছেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় জেলা প্রশাসক বেতন পান। তিনি জেলার পিতা। তার সঙ্গে একজন মুক্তিযোদ্ধা দেখা করতে গিয়ে দেখা পান না। এর চেয়ে লজ্জার কি হতে পারে। এই কারণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রত্যাখ্যান করেছেন বাবা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রশাসন থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করতে যাওয়ার পর বিষয়টি অবগত হই। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করতে না দেয়ায় তা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেনের মুক্তিবার্তা নং ০৩০৮০১১০০২, ভাতা বই নং -৮১৯।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

ক্রিকেট

তাসকিনের পরিবর্তে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে যে ক্রিকেটারকে সুযোগ দিলো বিসিবি

তাসকিনের পরিবর্তে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে যে ক্রিকেটারকে সুযোগ দিলো বিসিবি

গতকাল শেষ হল বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে সিরিজ। এই সিরিজ ৪-১ জিতে নেয় বাংলাদেশ। তবে সিরিজের ৪র্থ ...

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল প্রকাশ করলেন নাজমুল আবেদীন

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল প্রকাশ করলেন নাজমুল আবেদীন

দরজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগামী ১ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঠে শুরু হবে ...

ফুটবল

বায়ার্ন কি পারবে রিয়ালকে বধ করতে?

বায়ার্ন কি পারবে রিয়ালকে বধ করতে?

চ্যাম্পিয়নস লিগেরগের সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মে ৯ তারিখ রাত ১ টায় মুখোমুখি হবে ক্লাব ...

কোপা আমেরিকার আগে বড় ইনজুরি মেসি সহ দুই বিশ্বকাপজয়ী তারকা খেলোয়াড়

কোপা আমেরিকার আগে বড় ইনজুরি মেসি সহ দুই বিশ্বকাপজয়ী তারকা খেলোয়াড়

জুনের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকা। তবে এবারের অনুষ্ঠানটি শুধু ...



রে