চরম বিপদে পাকিস্তান ক্রিকেট : ভেতরের খবর বাইরে আনলেন শহিদ আফ্রিদি

২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের করুণ পরিণতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আয়োজক দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান দল গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছে, একটি ম্যাচেও জয় না পেয়ে। এই ব্যর্থতার পর পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শহিদ আফ্রিদি পুরো ক্রিকেট ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তার মতে, পাকিস্তান ক্রিকেট এখন "আইসিইউতে" (Intensive Care Unit) রয়েছে এবং এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পুরো সিস্টেমের আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
আফ্রিদির কঠোর সমালোচনা: "মানুষ বদলায়, সিস্টেম বদলায় না"শহিদ আফ্রিদি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB) এবং গোটা ব্যবস্থাপনার ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এক ইভেন্টে মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন:
"প্রত্যেকবার যখন নতুন কেউ পিসিবির চেয়ারম্যান হন, তখন তিনিই বলেন সবকিছু ঠিকঠাক করে দেবেন। কিন্তু মানুষ বদলে গেলেও, সিস্টেম কেন বদলায় না? পাকিস্তানের ক্রিকেট এখন আইসিইউতে রয়েছে এবং বড় টুর্নামেন্টের আগে অস্ত্রোপচারের কথা বলা হয়। কিন্তু সিস্টেম বদল না হলে, অবস্থার উন্নতি হবে না।"
আফ্রিদির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, শুধু খেলোয়াড় পরিবর্তন বা কোচ বদলালেই পাকিস্তান ক্রিকেটের উন্নতি হবে না, বরং গোটা সিস্টেমে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।
অধিনায়ক পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নচ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যর্থতার পর পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলের জন্য মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সরিয়ে আগা সালমনকে অধিনায়ক করা হয়েছে, যা আফ্রিদির একদমই পছন্দ হয়নি।
তিনি বলেন:
"রিজওয়ান মাত্র ৫-৬ মাস অধিনায়কত্বের সুযোগ পেয়েছিল, আর এত দ্রুত তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। একজন অধিনায়ককে অন্তত দুই বছর সময় দেওয়া উচিত। আমাদের বোর্ডের ধৈর্যের অভাব আছে।"
এর ফলে পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরণ নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠেছে।
"ক্রিকেট বোঝেন না পিসিবি চেয়ারম্যান"আফ্রিদি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহসিন নাকভির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানান, নাকভি নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি ক্রিকেট সম্পর্কে কিছুই জানেন না!
"কিছুদিন আগে লাহোরে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মাঠের উন্নয়ন, গদ্দাফি স্টেডিয়ামের কাজ সব ভালো, কিন্তু উনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি ক্রিকেট বুঝি না।’ যদি ক্রিকেট না বোঝেন, তাহলে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সাথে বসুন, পরামর্শ নিন।"
একজন চেয়ারম্যান যখন নিজেই স্বীকার করেন যে তিনি ক্রিকেট বোঝেন না, তখন বোর্ডের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
পাকিস্তান ক্রিকেট কেন এত পিছিয়ে?শহিদ আফ্রিদির মতে, পাকিস্তান ক্রিকেট এখনো আশির দশকের মতো খেলছে। আধুনিক ক্রিকেটের ধারায় পাকিস্তান এখনো ঢুকতে পারেনি।
তিনি বলেন:
"২০২৫ সালে এসে পাকিস্তান এখনো আশি ও নব্বইয়ের দশকের মানসিকতায় ক্রিকেট খেলছে। অন্য দলগুলো যেখানে আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা বেশি ডট বল খেলছে, যার ফলে দলের পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।"
আফ্রিদির মতে, পাকিস্তান ক্রিকেটের উন্নতির জন্য দ্রুত আক্রমণাত্মক মানসিকতার খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে।
পাকিস্তানের ক্রিকেটব্যবস্থার গভীর সংকটপ্রাক্তন পিসিবি চেয়ারম্যান নাজম শেঠি মনে করেন, পাকিস্তানের ক্রিকেটব্যবস্থা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে পিছিয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের পুরনো ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছিল, যা দীর্ঘমেয়াদে দলের ক্ষতির কারণ হয়েছে।
তিনি বলেন:
"পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট অনেক বছর ধরে সফলভাবে চলছিল, কিন্তু হঠাৎ করে অস্ট্রেলিয়ান হাইব্রিড মডেল অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা আমাদের নিজস্ব ক্রিকেট কাঠামো নষ্ট করে ফেলেছি। এর ফল এখন আমরা ভোগ করছি।"
এ থেকে বোঝা যায়, পাকিস্তানের ক্রিকেট সিস্টেম শুধুমাত্র মাঠের খেলা নয়, বরং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তেও ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
পাকিস্তানের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী?বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আফ্রিদি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:
সিস্টেম পরিবর্তন: কেবল খেলোয়াড় পরিবর্তন নয়, বরং গোটা ক্রিকেট কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।আক্রমণাত্মক ক্রিকেট: আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনা: ক্রিকেট বোঝেন না এমন ব্যক্তিদের বোর্ড থেকে সরিয়ে যোগ্য প্রশাসক এবং প্রাক্তন ক্রিকেটারদের দায়িত্ব দিতে হবে।অধিনায়কত্বে স্থিতিশীলতা: একজন অধিনায়ককে অন্তত দুই বছর সময় দিয়ে পরিকল্পিতভাবে দল গঠন করতে দিতে হবে।ঘরোয়া ক্রিকেটের পুনর্গঠন: পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটকে আগের মতো শক্তিশালী করতে হবে, যাতে নতুন প্রতিভা উঠে আসতে পারে।শেষ কথাপাকিস্তান ক্রিকেটের বর্তমান সংকট শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা নয়, বরং এর গভীরে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী প্রশাসনিক ভুল, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা। শহিদ আফ্রিদির ক্ষোভ এবং সমালোচনা এই সমস্যাগুলোকেই সামনে এনেছে।
এই মুহূর্তে পাকিস্তান ক্রিকেট সত্যিই এক গভীর সংকটে আছে। এখন দেখার বিষয়, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এবং সরকার আসলেই এই সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা, নাকি এই অবস্থা চলতেই থাকবে।
- এই ৮টি সিনেমার শুটিংয়ে বাস্তবেই স‘হবা‘স করতে হয়েছে
- ক্রিকেট বিশ্বে শোকের ছায়া : হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটার
- বিয়ে ছাড়াই সন্তান জন্মদানের শীর্ষে ৪টি দেশ
- আইপিএলকে টেক্কা দিতে, বিসিবির সেরা উদ্যোগ
- মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন ঘাঁটি আছে
- ভ‘য়া‘বহ বি‘স্ফো‘র‘ণে কেঁপে উঠল কাতার
- কুয়েতে পুনরায় বিমান চলাচল শুরু নিয়ে পাওয়া গেলো নতুন খবর
- দোহা-কুয়েত-শারজাহ-দুবাই রুটে ১১ ফ্লাইটের সময়সূচি বিপর্যস্ত
- আজকের টাকার রেট কত জেনে নিন প্রবাসীরা
- আমিরাতের আকাশসীমা বন্ধ,বিমান চলাচল স্থগিত
- ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছে কাতার
- আজকের মালয়েশিয়ান রিংগিত রেট (২৪ জুন ২০২৫)
- দুইবার জামানত বাজেয়াপ্ত হলে তারা আর রাজনীতি করতে পারবে না
- মিথ্যা বলার পর শরীরের কোন অঙ্গটি গরম হয়ে যায়
- যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কি ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে পারবে ইরান