একজন প্রবাসীর স্ত্রীর গল্প

বলেই একজন আরেকজনের গায়ে হেসে লুটিয়ে পড়ছে।
প্রতিদিন বিকেলে ‘তানহা’কে নিয়ে কোচিং এ আসার পর প্রায় প্রত্যেক ভাবীদের এসব অসহ্যকর কথা শুনতে হয় আমাকে।জুইয়ের আম্মু হঠাৎ পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে,
-কি হলো তানহা’র মা, এতো চুপচাপ কেনো?তুমিও কিছু বলো তোমার জামাইয়ের কথা!
আমি এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দেই,-আমার তো বলার মতো কিছু নেই ভাবী,প্রতি ২ কিংবা ৩ বছর বাদে একবার দেখা পাই আমি তানহা’র আব্বুর।বাবা-মা যখন থেকে প্রবাসী স্বামীর কাছে বিয়ে দিয়েছে ‘তীর্থের কাকের’ মতো চেয়ে থাকি,কবে আবার তার দেখা পাবো?
জুইয়ের মাঃ তোমারই তো শান্তি, চাইলেই দেশে বসে ৮/১০ টা প্রেম করতে পারো,জামাই টের ও পাবেনা।আমার জামাই তো খালি সন্দেহ করে আমাকে।-কি বলেন ভাবী?জামাই থাকতে প্রেম কেনো করবো?
জুইয়ের মাঃ এতো সুন্দর তুমি,বয়স ও কম।ক্যামনে থাকো জামাই ছাড়া?নিজের রুপ-যৌবন এইভাবে নষ্ট করিওনা।তোমার জামাই বিদেশে কতো জনের সাথে ঘুমায় তা কি তোমারে বলে?-না জেনে মন্তব্য করা কি ঠিক ভাবী? যদি তিনি পাপ করে তার কৈফত তিনি আল্লাহ্র কাছে দেবে।আমি কেনো পাপের বোঝা মাথায় নেবো।
জুইয়ের মাঃ শোন! এই পাপ-পূন্যের ভাত নেই আজকাল। শ্বশুর বাড়ির মানুষ কোনদিন আপন হয় না।নিজে ব্যাংক-ব্যালেন্স করো।জমি-জমা কেনো,নাহলে যখন শুনবা জামাই আরেকটা বিয়া করছে তখন আমার কথা মনে কইর্যা পস্তাবা।
আমি আর জুইয়ের মা’র কথায় কান দিলাম না।
তানহা’র বয়স যখন ৩ বছর তখন শেষ এসেছিলো তানহা’র আব্বু।এখন তানহা’র বয়স ৫ বছর চলছে।বিয়ের পর থেকে ৬ বছরে ৩ বার এসেছেন তিনি।তাও প্রত্যেকবার ৩/৪ মাসের বেশী থাকেন নি।প্রত্যেকবার যখন তিনি আসেন আমার মনে হয় আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে,খুব অচেনা লাগে মানুষটাকে,তবে তিনি মানুষ হিসেবে খারাপ না।দেশে থাকলে অন্য ভাবীদের বরদের মতোই আমার খেয়াল রাখতো।
বিয়ের আগে যে আমি প্রেম করিনি তা কিন্তু নয়,সত্যি বলতে লজ্জা নেই,কলেজ লাইফে একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসতাম,কিন্তু সেইম এইজ এর রিলেশনে যা হয় আর কি?বিয়ে আর হয়নি।আহারে! ছেলেটা আমার বিয়ের দিন ঘুমের ঔষধ খেয়ে হাসপাতালে ছিলো,কিন্ত কিছুই করার ছিলোনা আমার।এখন মাঝে মাঝে স্কুল আর কলেজের সেই বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা ভাবি। স্মৃতিগুলো খুব আঘাত করে আমাকে,ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় ছেলেবেলায়।
‘তানহা’ আমার একমাত্র মেয়ে।তানহা’র আব্বুর এখন একটা ছেলের সখ।আমার জীবন অনেকটা রুপকথার রাজা-রানীর মতো,”অবশেষে তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো”এরকম। তাই পরেরবার একটা ছেলে হলে বাচ্চা নেয়ার ঝামেলা থেকে বেঁচে যাই। কেনোনা অন্যান্য ভাবীদের মতো আমার অসুস্থ অবস্থায় খেয়াল নেয়ার মতো কেউ থাকেনা।নিজের ঔষধ নিজের কিনে খেতে হয়,নিজের সংসারের রান্নার বাজার নিজের করতে হয়।তার উপরে শাশুড়ি, ননদিনী কিংবা শ্বশুর বাড়ির অন্যান্য আত্নীয়-স্বজনদের মন জোগিয়ে চলতে হয়।
বছর এর বছর এভাবেই সন্তান লালনপালন আর পরিবারের দেখাশুনা করেই কেটে যায় আমাদের মতো প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীদের।দিনশেষে ভালোবেসে ‘ভালোবাসি’ বলার মতো মানুষটা পাশে থাকেনা।মুখে তুলে একবারের জন্যও অন্যান্য ভাবীদের বরের মতো কেউ খাইয়ে দেয়না কিংবা ঈদ-কুরবানীতে কেউ শপিংমলে নিয়ে যেয়ে নিজের পছন্দের শাড়ি-চুড়ি কিনে দেয়না।আমার’তো আগে শাশুড়ি আর ননদের জন্য কিনতে হয়।সবশেষে তানহা’র জন্য কেনাকাটা করে নিজের জন্য কিছু কেনার ইচ্ছেটা কেনো জানি মরে যায়।
টাকা-পয়সার অভাব নেই আমার প্রবাসী স্বামীর।কিন্তু এসবের মাঝে শান্তি খুঁজে পাইনা আমি। এতো প্রতিক্ষার পর যখন একবার স্বামী বিদেশ থেকে ফিরে তখন তিনি শ্বশুর বাড়ির আত্নীয়-স্বজন নিয়ে এতোই ব্যস্ত থাকে যে আমাকে আর সময় দিতে পারেনা।
যে কয়টা দিন দেশে থাকে দিন শেষে রাত্রের সময়টুকু তাকে কাছে পাই,তখন মনে হয় আমার আর তার সম্পর্ক শুধু বিছানার মাঝেই সীমাবদ্ধ।
তবে আমি তানহা’র বাবার দোষ দিচ্ছি না।তাকেও তো আত্নীয়-স্বজন এর মন জোগিয়ে চলতে হয়। নাহলে গুরুজনদের কটু কথা শুনতে হবে,”এতোদিন পর দেশে এসে বউয়ের আঁচলের নিচে রইলো”
ননদ আর ভাশুরের ছেলেমেয়েরা ব্যস্ত থাকে তাদের মামা কিংবা চাচা বিদেশ থেকে কি এনেছে তাই নিয়ে।কোনটা আনতে বলে আনা হলোনা,কে কোনটা পায়নি সেই অভিযোগ নিয়ে।মাঝে মাঝে অনেক অভিযোগের বোঝা আমার মাথায় ও পরে,”আমি নাকি বিদেশি জিনিস বাপের বাড়ি নিয়ে যাই”।বিয়ের আগে তিনি নাকি এমন ছিলেন না।তবে আমি তো জানি আমার আর তার সম্পর্ক কতোটা ফরমাল।
শেষবার যখন তানহা’র আব্বু এসেছিলো সামান্য কিছু বিদেশি চকলেট আমার বোনের ছেলেমেয়েদের দেয়ায় আমার শাশুড়ি আমাকে অকথ্য ভাষায় অপমান করে।সেদিন খুব কেঁদেছিলাম আমি,মুখ বুঝে সংসার টিকিয়ে রাখতে সবকিছু সহ্য করতে হয় আমাদের মতো নারীর।
আমাদের মতো বিবেকবান মেয়েরা আর যাই পারুক সংসার ভাঙতে পারেনা।
আমার উচ্চস্বরে হাসতে নেই আবার পরপুরুষের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে নেই।তাহলেই যে মানুষ কথা তুলবে “তানহা’র মা’র স্বামী বিদেশে থাকে আর সে অন্য পুরুষের সাথে হাসাহাসি করে”।এইসব অপবাদ যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক বুঝি আমি।আমাদের মতো প্রবাসী স্বামীর স্ত্রী’দের কান্না শুধু রাতের বালিশের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়।
ভাবতে ভাবতে তানহা’র কোচিং ছুটি হয়ে যায়। এখন বাসায় ফেরার পথে বাজার আর শাশুড়ির ঔষধ নিতে হবে।রাতের রান্না করে তানহা’কে পড়াতে হবে। তারপর বাসার প্রয়োজন বুঝিয়ে দিয়ে একবার যদি তানহা’র আব্বুর ফোন পাই।তারপর আবার সকাল,ফজরের নামাজের পর সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে তানহা’কে নিয়ে স্কুলে আসবো। আবার বিকেল হবে,ভাবীদের গল্প শুনবো কোচিং এ এসে।তারপর আবার রাত হবে,চোখের অশ্রু ও ফুরিয়ে যাবে।একদিন বুড়ি হয়ে যাবো,কিন্তু আমার গল্প সবার অজানাই থেকে যাবে।
- সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য বড় সুখবর, যে প্রজ্ঞাপন জারি করল অর্থ মন্ত্রণালয়
- অভিনেতা সিদ্দিককে পিটুনি দিয়ে থানায় সোপর্দ করল ছাত্রদল
- হঠাৎ পাল্টে গেলো পেঁয়াজের বাজার
- কমলো সয়াবিন তেলের দাম, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
- এবার যে ভবিষ্যদ্বাণী স্বর্ণের দাম নিয়ে
- যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, জানুন ইসলামী বিধান অনুযায়ী
- আরও কমলো ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম
- শিক্ষকদের বেতন স্কেল নিয়ে সুখবর
- নুসরাত-অপু-নিপুণ-জায়েদ—হত্যাচেষ্টা মামলায় যুক্ত ১৭ শোবিজ তারকা
- সৌদি সরকারের জরুরি নির্দেশনা
- চিকিৎসা শেষে দেশে আসছেন খালেদা জিয়া, রাজনীতি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে
- সৌদি থেকে নিঃস্ব হয়ে ফিরেছেন শতাধিক প্রবাসী
- শক্তিশালী কালবৈশাখীতে কয়েকটি উপজেলার বাড়িঘর-ফসল তছনছ
- অভিষেকে বাজিমাত, মাসাকেসার ঘূর্ণিতে কাঁপলো টাইগাররা
- দেশের ৯ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা