রিকশা চালিয়েই সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেন জেসমিন
লোকের বাড়ি কাজ ছেড়ে জেসমিন শুরু করলেন কারখানার কাজ। কিন্তু সেখানেও মজুরি কম। তার উপর শরীরের প্রচণ্ড যন্ত্র’ণা হতে থাকল। ফলে কারখানার শ্রমিক হয়ে থাকাও বেশি দিনের জন্য হলো না।
এবার কী'’ তবে ভিক্ষা? জেসমিনের মন থেকে সায় দিল না। আল্লাহ এক জোড়া হাত-পা দিয়েছেন। তার পরেও কেন বিনা পরিশ্রমে উপার্জন করবেন? ভাবলেন এমন পথে যাবেন যেখানে মেয়েরা সাধারণত পা রাখেন না।
প্রতিবেশীর একটি রিকশা নিয়ে শুরু হল চেষ্টা। প্রথমে দুঃসাধ্য মনে হলেও কয়েক দিনের মধ্যে আয়ত্তে এসে গেল। জেসমিন ঠিক করলেন তিনি রিকশা চালিয়েই উপার্জন করবেন।
শেষ পর্যন্ত অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন জেসমিন। বর্তমানে চট্টগ্রামে রাস্তায় রিকশা চালান তিনি। রিকশার প্যাডলই তার এবং সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে। শুধু খাবারই না, তিন সন্তানের স্কুলের বেতনের জোগান দিয়েছেন রিকশা চালিয়ে।
জেসমিনের কাছে লড়াই শুধু অসম্ভব নয়, ছিল অ’ত্যন্ত অসম। প্রথম দিকে উড়ে এসেছে অসংখ্য টিপ্পনি। ‘এটা মেয়েদের কাজ নয়’, ‘এই কাজ ইস’লামবিরোধী’, শুনতে হয়েছে এরকম অনেক কথা। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন জেসমিন।
প্রথম দিকে যাত্রী পেতেন না তিনি। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ জেসমিন। সংগ্রামের মূল্য পেয়েছেন তিনি। এখন যাত্রী পেতে সমস্যা হয় না। পুরনো যাত্রীরা তো আছেনই। নতুনরা প্রথমে একটু থমকে যান ঠিকই। কিন্তু শেষ অবধি জেসমিনই তাদের পৌঁছে দেন গন্তব্যে।
অমানুষিক পরিশ্রম হয় জেসমিনের। কিন্তু নিজের জীবনে খুশি জেসমিন। রিকশা চালিয়ে প্রতি মাসে তার উপার্জন হয় ১৫ হাজার টাকার বেশি।মাথায় হেলমেট, পরনে ছাপা শাড়ি। রিক্সা চালানোর পরেও হাসি মিলিয়ে যায় না জেসমিনের মুখ থেকে। এ ভাবেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার আনন্দ।