| ঢাকা, রবিবার, ১০ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবা মা-কে হারানো সাগর-রুনির ছেলে মেঘ এর এখন একটাই স্বপ্ন

ক্রিকেট ডেস্ক . স্পোর্টসআওয়ার২৪
২০২২ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৬:৪০:৩৩
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবা মা-কে হারানো সাগর-রুনির ছেলে মেঘ এর এখন একটাই স্বপ্ন

১০ বছর আগের সেই ছোট্ট মেঘ এখন কিশোর। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেটেও বেশ মনোযোগ তার। একদিন আগেও খেলে এসেছে সিরাজগঞ্জে বিসিবির ইয়ুথ টাইগার্স অনুর্ধ্ব-১৬ জোনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে পঞ্চগড় জেলা দলের হয়ে। তার একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলা। সে লক্ষ্যেই ক্রিকেটকে ধ্যান-জ্ঞান করে নিয়েছে মেঘ। পড়াশুনার পাশাপাশি সময় দিচ্ছে ব্যাট বল হাতে ক্রিকেট মাঠে।রাজধানীর গুলশানের একটি স্কুলে স্ট্যান্ডার্ড ৯-এ পড়ছে মেঘ।

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর নানি নুরুন্নাহার মির্জার আদর সোহাগেই বড় হচ্ছিল মেঘ।গত ৫ জানুয়ারি নানিও চলে যান পৃথিবী ছেড়ে।মেঘকে ভালোবাসার চাদরে আগলে রাখা আরেকজন তার খালা নাবিলা ইফাত ধ্রুবও গত জুনে মারা গেছেন। ভালোবাসার মানুষগুলোকে একে একে হারিয়ে এখন মামা-মামীর স্নেহের চাদরে বড় হচ্ছে মেঘ।

মামা নওশের রোমান জানান, ‘কোথাও আমরা মেঘকে একা যেতে দেই না। সর্বশেষ বুধবার সিরাজগঞ্জে ইয়ুথ টাইগার্স টুর্নামেন্ট-১৬-এ ম্যাচ খেলেছে, আমি ওর সঙ্গেই ছিলাম। ও যখন বাসার পাশেই ইন্দিরা ক্রিকেট একাডেমিতেও প্র্যাকটিস করতে যায়, তখনও আমরা ওর সঙ্গে থাকি। ওর ইচ্ছাটাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই।তাই সবসময় ওর পাশে থাকার চেষ্টা করি। যাতে মেঘ তার বাবা-মায়ের অভাবটা বুঝতে না পারে।’

মেয়ে-জামাতাকে হারিয়ে নুরুন্নাহার মির্জা নাতিকে অবলম্বন করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন বুনেছিলেন। সাগর-রুনির খুনিদেরও শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারলেন না তিনি। নাতির ঘুরে দাঁড়ানো ভবিষ্যৎটাও দেখা হলো না তার। নওশের রোমান বলছিলেন,খালা মারা যাওয়ার পর কয়েকবার মেঘ আজিমপুর কবরস্থানে ছুটে গেছে। একই জায়গায় ওর মা-বাবা, নানি ও খালা ঘুমিয়ে আছে। রাজধানীর গুলশানের একটি স্কুলে স্ট্যান্ডার্ড ৯-এ পড়ছে মেঘ। সাংবাদিক ফারজানা রূপা মেঘের স্কুলে আনা-নেওয়ার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে মেঘ বলছিল, ‘আমার নানি ছিলেন ক্রিকেটের খুবই ভক্ত। ইন্ডিয়ার আইপিএলের নিলামের সময় নানি স্বপ্ন দেখতেন আমিও একদিন অত টাকার নিলামে খেলব। মূলত নানির উৎসাহেই আমি ক্রিকেটকে ভালোবেসেছি। এখন আমার মূল লক্ষ্য জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলা। যেভাবে চলছে, আমি আশা করি অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলতে পারব। অনুর্ধ্ব-১৪ দলে প্রায় চান্স পেয়েই গিয়েছিলাম। চার ধাপে সেখানে পরীক্ষা দিতে হয়। চতুর্থ ধাপের শেষ মুহুর্তে আমি বাদ পড়েছি। আসলে অনেক বেশি নার্ভাস থাকার কারণে ভালো করতে পারিনি। প্রথম ম্যাচটা খারাপ করলেও পরের দু'টি ম্যাচ ভালো করেছি।’

বিসিবির ইয়ুথ টাইগার অনূর্ধ্ব-১৬ জোনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট তিনটি ম্যাচ খেলার কথা ছিল মেঘের। প্রথমটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচটি বুধবার সে খেলেছে। আর শেষ ম্যাচটি ছিল শুক্রবার। এদিন মেঘের বাবা-মায়ের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। তাই ম্যাচটি না খেলেই ঢাকায় ফিরে এসেছে মেঘ। মেঘ অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিং করে। তবে বোলিংটা একটু বেশি পছন্দ তার। মেঘ বলছিল, ‘আমি যদি টানা এক বছর অনুশীলন করতে পারি তাহলে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে তো খেলতে পারবোই। তারপর জাতীয় দলেও খেলতে পরাবো ইনশাল্লাহ’।

মেঘের প্রিয় তারকা সাকিব, মাশরাফী ও মুস্তাফিজ। তাদের তিনজনের খেলাই তার খুব পছন্দ।

মেঘ জানায়, ‘আমি সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হতে চাই। আমি চাই সাকিব যেভাবে ক্রিকেট খেলে সুনাম অর্জন করেছেন এবং দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন সে রকম খেলতে। আমি সব সময় সাকিবের খেলা অনুসরণ করি।’ তবে সাকিব স্পিন আর মেঘ পেস বল করে। ব্যাটিং বা বোলিং- দু'টোকেই সমান গুরুত্ব দেয় মেঘ। প্রথমদিকে ইন্দিরা ক্রিকেট একাডেমিতে অনুশীলন করলেও এখন শেখ জামাল ধানমন্ডি কাবের একাডেমিতে অনুশীলন করে মেঘ। এখানে দেশি-বিদেশি নামকরা কোচেরা প্রশিক্ষণ দেন।

খেলার বাইরে কীভাবে সময় কাটে মেঘের? জানতে চাইলে নওশের রোমান বলেন, "পড়াশোনাতে মনোযোগের কোন ঘাটতি নেই। এর বাইরে যে সময়টা ও পায় তার পুরোটাই ক্রিকেট নিয়ে থাকে। ফিটনেস নিয়ে থাকে। করোনার মধ্যে যখন কেউ ঘর থেকে বের হতে পারে না, তখনও বাড়িতেই নিয়মিত ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করেছে সে। আসলে স্কুল, ক্রিকেট প্র্যাকটিস করে আর সময় থাকে না। এভাবেই বড় হচ্ছে মেঘ।”

বাবা-মায়ের কথা কী ওর মনে পড়ে? জবাবে নওশের বলেন, প্রথমদিকে কিছু জানতে চাইলেও এখন আর ওভাবে কিছু জানতে চায় না। তবে কিছু কিছু শব্দ ওকে ভাবাচ্ছে। যেমন ধরেন ‘ধামাচাপা’। সেদিন আমার কাছে ও জানতে চাইল মামা ধামাচাপাটা কী? এই ধরনের কিছু শব্দ ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সবসময় আমরা ওকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করি। হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করি। পাশাপাশি আবদারগুলোকে খুবই গুরুত্ব দেই।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। দীর্ঘ ১০ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তারা বিগত ১০ বছরে ৮৫ বার সময় নিয়েও আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেননি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ৮৫তম তারিখ ছিল। কিন্তু এই তারিখেও অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেননি কর্মকর্তা। তাই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরবর্তী সময় ধার্য করেছেন ২৩ ফেব্রুয়ারি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

ক্রিকেট

বিসিবির জরুরি বৈঠক: থাকছেন কি গামিনি, নাকি আসছেন নতুন কোচ

বিসিবির জরুরি বৈঠক: থাকছেন কি গামিনি, নাকি আসছেন নতুন কোচ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদিন ফাহিম, জাতীয় দলের ...

বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়া এখন সহজ,দেখেনিন সহজ সমীকরণ

বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়া এখন সহজ,দেখেনিন সহজ সমীকরণ

মিয়ানমারে গত মাসেই নারী ফুটবলে নতুন ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ—প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের মূল পর্বে জায়গা ...

ফুটবল

শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামছে লিভারপুল ও বার্সেলোনা

শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামছে লিভারপুল ও বার্সেলোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন মৌসুম শুরু হতে চলেছে ফুটবলে উত্তেজনার ঝড়। রোববার (১০ আগস্ট) ইংলিশ ও ...

চমক দিয়ে এমিরেটস ব্যালন ডি’অর জিতলেন যে ফুটবলার

চমক দিয়ে এমিরেটস ব্যালন ডি’অর জিতলেন যে ফুটবলার

সংযুক্ত আরব আমিরাত, ২০২৫: ইরানি ফুটবলার সারদার আজমুন আজ এমিরেটস প্রো লিগের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ...

Scroll to top

রে
Close button