উপদেষ্টাদের যে ভুলের মাশুল দিতে হতে পারে ছাত্রদের
আলমের খান: বর্তমানে দেশের রাজনীতি রোমাঞ্চকর একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে দেশের অবস্থান যেকোনো দিকে যেতে পারে। ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার হয়তো দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবেন। অথবা দেশকে ভরাডুবির শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়ে আজীবনের জন্য কালো এক অধ্যায়ে পরিণত হবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দোষ ধরার সময় এখনো আসেনি। খুবই স্বল্প সময় হয়েছে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারব্যবস্থাটি। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশে ভালোর চেয়ে খারাপই হয়েছে যেন বেশি। প্রতিদিনই কোন না কোন জায়গায় হট্টগোল নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসাবোতে দুই রিকশা চালককে খুন, বিনা কারণে এই খুনগুলো বিগত সময়ে হয়েছে শুনেছেন কি? শুধু তাই নয় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারদের উপর আক্রমণ। ফার্মগেটের রেটিনা কোচিংয়ের সামনে এক অভিভাবককে বেধড়ক পেটানো।
প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে কেউ নিহত কিংবা আহত হচ্ছে। এছাড়াও মিলিটারির বড় একটি ফ্র্যাকশন ডঃ ইউনূসের সরকারকে সেভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলো গোপনে গোপনে বিএনপির সাথে জোট বদ্ধ হচ্ছে। বিএনপি অন্তদলীয় কোন্দলে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার প্রাথমিকভাবে ক্ষমতা নিলে ধারণা করা হয় নতুনত্বের অন্বেষণ হবে দেশে। তবে দেশ যেই পথে এগোচ্ছে বিএনপি'র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই পরিস্থিতির জন্য উপদেষ্টাদের কিছুটা হলেও দায়ভার নিতে হবে।
অন্তবর্তীকালীন সরকার খুব কম দেশেই গঠন করা হয়েছে, সাধারণত এই সরকারগুলো তাদের কার্যকাল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই স্পষ্ট করে দেন। তবে বাংলাদেশে ঘটেছে উল্টো ঘটনা, নিজ থেকে প্রধান উপদেষ্টা কিংবা অন্যান্য উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ এর প্রয়োজন বোধ করেনি। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্থাপনের পর তারা জানান যতদিন দেশকে পুরোপুরি সংস্কার না করা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবেন। দেশের সংস্কার করা হবে, দেশে নতুনত্বের অন্বেষণ হবে খুবই ভালো কথা।
তবে কথাটা যেভাবে বলা হয়েছে তার মধ্যে গণতান্ত্রিক কিছু খুঁজে পাচ্ছেন কি? ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের অন্যতম কারণ ছিল সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠনে সরকারের বাধা প্রদান। এই সরকারও অনুরূপ কাজ করছে না তো? হয়তো না, তবে তাদের এই বিষয়ে স্পষ্ট করে বলাটা আবশ্যক ছিল। যেহেতু আমরা উপদেষ্টাদের মস্তিষ্কের ভিতরে গিয়ে তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে পারছি না। তাই কষ্ট করে তাদের নিজেদের তা জানাতে হবে।
তা না হলে দেশের বৃহৎ একটি অংশ মনে করতেই পারে এক ফ্যাসিস্টের পর আরেক ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। সারজিস আলমের মতো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ যখন জনসমক্ষে বলেন বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে থাকা মানুষজন টিকতে পারবে না। তখন সবার মনে আশঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক নয়, এরা আসলেই গণতন্ত্রের জন্য এসেছে তো? এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আরো একটি ভুল দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে না পারা। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস স্বভাবত ঠাণ্ডা মাথার মানুষ।
দেশের উত্তপ্ত জনতা কে কোন কারণবশত তিনি কাবু করতে কিছু অংশে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশে আন্দোলন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। রিক্সাচালক প্যাডলচালকদের মধ্যে সংঘর্ষ, গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, কিংবা ছাত্রদের মধ্যে। এছাড়াও দেশে বিভিন্ন জায়গায় লুঠতরাজের খবর পাওয়া যায় কয়েকদিন পরপরই। সম্ভাবনা ভালো রয়েছে যে এই সবকিছুই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অর্থায়নে হচ্ছে।
তবে তারপরও এর দায় কিছু অংশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিতে হবে, কারণ নিজেদের কার্যকালীন সময়ের নিশ্চয়তা না দেওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তার সঞ্চার ঘটেছে। এছাড়াও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভালই দূরত্ব তৈরি হয়েছে। শঙ্কা এটাই দেশবাসীর যাতে আন্দোলন করে এই সরকারকে নামাতে না হয়। এবং প্রত্যাশা থাকবে সুষ্ঠু একটি গণতান্ত্রিক দেশের মতো যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ক্ষমতার পালাবদলগুলোহয়।।