কোটাবিরোধী আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে। ভিসা বাতিল করায় হতাশ শেখ হাসিনা।

হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আহ্বান জানিয়েছিল।

তারপর এদিকে সোসাল মিডিয়া এক্স-এ এক পোস্টে শেখ হাসিনার আমেরিকান ভিসা বাতিলের খবর জানিয়েছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন সরকার। বার্গম্যান এক্সকে বলেছেন যে পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তবে পালিয়ে যাবার পর ভারতে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসা বাতিলের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি স্পোর্টস আওয়ার-২৪। বিস্তারিত জানতে স্পোর্টস আওয়ার ২৪ পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন এবেলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে উভয় পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ডেভিড বার্গম্যান লিখেছেন, শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে দেশ ছেড়েছেন এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভারতে আছেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। তার ছেলে জয় ভার্জিনিয়ায় থাকেন। হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ব্রিটিশ এই সাংবাদিক লিখেছেন, হাসিনা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়ার কথা বিবেচনা করছেন, সেখানে তার বোন (শেখ রেহানা) এবং ভাগ্নি (এমপি টিউলিপ সিদ্দিক) থাকেন। হাসিনা যে পদ্ধতিতে ব্রিটেনের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, অভিবাসন আইন অনুযায়ী তা সম্ভব নয়।

সোমবার ছাত্র জনতার কঠিন চাপের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে স্থপাপত্র জমা দেন। তারপর ভারতের উত্তর প্রদেশে যান শেখ হাসিনা। তাকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে রাজি নয়।

সোমবার শেখ হাসিনার সাথে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আসেন। তবে রেহানার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। একটি সূত্র জানায়, রেহানা শিগগিরই যুক্তরাজ্যে যাবেন। তবে হাসিনা তাদের সঙ্গে যাবেন কি যাবেন না তা ঠিক হয়নি।

এদিকে গতকাল ভারতে পৌঁছে শেখ হাসিনা প্রথমে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, শেখ হাসিনা তাদের কাছে ‘অল্প সময়ের মধ্যে’ জরুরিভিত্তিতে আশ্রয় চান। এ সময় হাসিনা আরও জানান, ভারতে অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করবেন তিনি। জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘‘খুবই অল্প সময়ের নোটিশে, অল্প সময় অবস্থানের জন্য শেখ হাসিনা ভারতে আসার অনুমতি চান।’’

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির সংসদে আরও বলেছেন, তারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এমন আশাও ব্যক্ত করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা যে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশে ২০ হাজার ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৮ হাজার জন ফিরে এসেছেন। এছাড়া তাদের নজর সংখ্যালঘুদের ওপর থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।