নাজমুল হোসেন শান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নেতৃত্বে আসেন বেশ চ্যালেঞ্জিং সময়ে। তার অধিনায়কত্বের মেয়াদে কিছু ভালো দিক যেমন ছিল, তেমনি ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাবও ছিল প্রকট। শান্ত মাঠে ফিল্ডিং সাজানো, বোলিং পরিবর্তন এবং দলের অন্যান্য স্ট্র্যাটেজিক বিষয়ে সাধারণত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার ফলে অধিনায়কত্বের মৌলিক জায়গায় তিনি পাশ মার্ক পেয়েছেন। কিন্তু মূল সমস্যা ছিল তার নিজস্ব ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে।

শান্তর ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। কয়েকটি ইনিংসে ভালো পারফর্ম করার পরও তিনি লম্বা সময় ধরে রান করতে পারেননি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে তার ফর্ম খুবই খারাপ ছিল, এবং অনেক ম্যাচেই দলের জন্য কার্যকরী অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই রানখরা নিয়ে ক্রীড়ামহলে সমালোচনাও বাড়তে থাকে, যা তার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে।

অধিনায়কত্বের চাপ তার ব্যাটিংয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। একজন অধিনায়ক হিসেবে মাঠের স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত এবং দলের চাপ সামলানোর পাশাপাশি নিজে ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব সামলানো—এটি তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্ত হয়তো অনুভব করেছেন যে, অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে তিনি ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারবেন এবং নিজের ফর্ম ফিরে পেতে সহায়তা পাবেন।

শান্ত ইতিমধ্যেই তার সিদ্ধান্ত বিসিবির কাছে জানিয়ে দিয়েছেন। ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের প্রতিবেদনে জানা যায়, বিসিবির বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে অধিনায়ক হিসেবে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন, তবে শান্ত রাজী হননি। তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিসিবি এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি, তবে শান্তর পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।

অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে, এটি হবে তার জন্য একটি নতুন সুযোগ ব্যাটিংয়ে আরও মনোযোগ দেওয়ার। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডকেও নতুন অধিনায়ক খুঁজে বের করতে হবে, যারা দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

ওমরাহ পালন করে সভাপতি ফারুক আহমেদ দেশে এলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। বিসিবির এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে ক্রিকবাজকে বলেন, ‘হ্যাঁ, সে আমাদের জানিয়েছে সাউথ আফ্রিকা সিরিজ শেষে সে আর দলকে নেতৃত্ব দিতে চায় না।’ একই প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়। কারণ আমি এখনও সভাপতির কাছ থেকে শোনার অপেক্ষায় আছি।’

২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন শান্ত। তবে তৎকালীন নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডের চাওয়াতে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যান তিনি। এদিকে গুঞ্জন আছে সাউথ আফ্রিকা সিরিজ শেষে শান্ত সরে দাঁড়ালে বাংলাদেশের ওয়ানডে এবং টেস্ট অধিনায়ক হতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে তাওহীদ হৃদয়কে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাকিব আল হাসানের জায়গায় স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্ত। এখন পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে ৯ টেস্টের তিনটিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় আছে। বাংলাদেশকে কমপক্ষে ৫ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন অধিনায়কদের তালিকায় জয়ের শতকরা হিসেবে সবার উপরে শান্ত। ব্যাটিং পরিসংখ্যানে তাকালে অবশ্য ব্যাটার ও অধিনায়ক শান্তর মাঝে খানিকটা পার্থক্য আছে।

অধিনায়ক হওয়ার আগে ২৩ টেস্টে ২৯.৮৩ গড়ে ১ হাজার ২৮৩ রান করেছেন। ৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে তিনটা হাফ সেঞ্চুরিও। অধিনায়ক হিসেবে ৯ টেস্টে ২৫.৭৬ গড়ে শান্তর রান ৪৩৮। সমান একটা করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। দুই সময়ের মাঝে তুলনা করলে দেখা যায় অধিনায়ক হিসেবে বাঁহাতি ব্যাটারের গড় কম। বড় ইনিংস খেলার দিক বিবেচনায় নিলে প্রতি ৫.৭৫ টেস্টে একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন। যেখানে অধিনায়ক শান্ত ৯ টেস্টে করেছেন এক সেঞ্চুরি।

বিস্তারিত আসছে...