বিসিবি পরিচালকের পদে তামিমের স্বপ্নে যে বড় বাধা: নতুন চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ
দেশসেরা ওপেনার ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালকে নিয়ে সাম্প্রতিক জল্পনা-কল্পনা মূলত তিনি ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাবেন নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে। তামিম ইকবালের ক্রিকেট ক্যারিয়ার যতটা উজ্জ্বল, তার নেতৃত্বের গুণাবলী এবং ক্রিকেটের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বিসিবি প্রশাসনিক পদে তার ভূমিকার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে। কিন্তু বিসিবি পরিচালক হওয়ার পথটা সহজ নয় তামিমের জন্য। বিসিবি গঠন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু পর্যায় রয়েছে, যেগুলো পার হতে হয়।
তামিমের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আলোচনা
সম্প্রতি বিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তা তামিমকে আরও কিছুদিন ক্রিকেটে দেখতে চান বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে তামিমের বিসিবি পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। তামিম বিভিন্ন বিষয়ে বিসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন, যার কারণে আলোচনা জোরদার হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সাথে বিসিবি সভাপতির বৈঠকে তামিমের উপস্থিতি এই ধারণাটিকে আরও শক্তিশালী করেছিল যে তিনি ক্রিকেটের বাইরেও ভূমিকা রাখতে পারেন।
বিসিবি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালক হওয়ার পদক্ষেপ
বিসিবি পরিচালক হওয়ার কিছু নিয়ম আছে। প্রথমত, তামিমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে হবে, কারণ তাকে সক্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে বেছে নেওয়া যাবে না। এরপর তাকে বিসিবির কাউন্সিলর হতে হবে। কাউন্সিলরশিপ হল বিসিবির বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জনের একটি প্রাথমিক পর্যায়।
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলর হওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। কাউন্সিলর হওয়ার জন্য তাকে তিনটি বিভাগের মধ্যে একটির মধ্যে পড়তে হবে:
১. বিভাগীয় বা জেলা কাউন্সিলর: একটি বিভাগীয় বা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হওয়ার জন্য, সংশ্লিষ্ট জেলা বা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বা প্রতিনিধির সুপারিশ প্রয়োজন। তামিম যেহেতু চট্টগ্রাম বিভাগের একজন ক্রিকেটার তাই এই বিভাগ থেকে তার কাউন্সিলর পদ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর জন্য একটি শূন্যপদ তৈরি করতে হবে, অর্থাৎ বর্তমান কাউন্সিলরকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (NSC) কর্তৃক মনোনীত কাউন্সিলর: তামিম বিসিবি পরিচালক নির্বাচনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (NSC) কর্তৃক মনোনীত কাউন্সিলরের স্থলাভিষিক্তও হতে পারেন। তবে এটি নির্ভর করবে বিদ্যমান কাউন্সিলরদের পদত্যাগ বা শূন্যপদ সৃষ্টির ওপর।
৩. প্রাক্তন খেলোয়াড়দের বিভাগ: প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড়রা বিসিবির 'সি' ক্যাটাগরির কাউন্সিলর হিসেবে মনোনীত হন। তামিম যেহেতু সাবেক অধিনায়ক তাই তাকেও এই ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন দেওয়া যেতে পারে। তবে এখানেও কাউন্সিলর পদের প্রয়োজন হবে।
পরিচালকের দায়িত্ব ও শূন্যপদ
বর্তমানে বিসিবিতে কিছু পরিচালকের পদ শূন্য বা শূন্য হওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যেমন খালিদ মাহমুদ সুজন ও নাইমুর রহমান দুর্জয় সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তবে এসব পদের জন্য তামিমের নির্বাচন নির্ভর করবে বিসিবির সিদ্ধান্তের ওপর। এগুলো পূরণ করতে বিসিবি উপ-নির্বাচন করলে তামিমকে প্রথমে ওই ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে হবে। এরপর পরিচালক পদে নির্বাচন হবে।
তামিমের ক্লাব বিভাগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আরেকটি সম্ভাবনা, তবে এখানে প্রক্রিয়াটি একই রকম। কাউন্সিলরদের একটি শূন্যপদ থাকতে হবে এবং একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ এবং জটিলতাতামিম ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে চাইলে বিসিবির প্রশাসনিক দায়িত্ব নেওয়ার এসব আলোচনা আপাতত স্থগিত থাকবে। কারণ বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সক্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে পরিচালক হওয়া সম্ভব নয়। তদুপরি, বিসিবি পরিচালকের পদ গ্রহণ করতে, তাকে একটি সুস্পষ্ট প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যা কেবল তার সিদ্ধান্তের উপর নয়, বিসিবির অভ্যন্তরীণ নীতি ও পদ্ধতির উপরও নির্ভর করবে।
বর্তমান বিসিবি বোর্ডের মেয়াদে আরও এক বছর বাকি থাকায় তামিমকে পরিচালক হিসেবে আনতে হলে তাদের দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অন্যথায়, বর্তমান আলোচনা অব্যাহত থাকলেও তিনি সরাসরি প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না।