২০২৩ সালের মত বড় অস্বস্তি নিয়েই বিশ্বকাপে যাচ্ছে বাংলাদেশ
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে কিছুটা চমক ছিল বাংলাদেশ। একজন বোলারের বিপরীতে ১০ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। একজন প্রকৃত বোলারের সাথে একজন সম্পূর্ণ বোলার থাকা ক্রিকেটে বিরল ঘটনা। তবে এই মিশ্রণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তরা।
আজ মিরপুরে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে 'ক্রাইসিসম্যান' মাহমুদউল্লাহর ৫০ রানে স্বাগতিকরা ইনিংস ছুঁয়েছে ১৫০ রান। যা শেষ পর্যন্ত পরাজয় ঠেকাতে পারে না। সফরকারী জিম্বাবুয়ে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটের জয়ে শেষ করেছে।
আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ২০ দলের টি-টোয়েন্টি কাপ শুরু হতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। বেশিরভাগ দল ইতিমধ্যে তাদের লাইনআপ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশও যেকোনো মুহূর্তে নিজেদের দল ঘোষণা করতে পারে। বিশ্বকাপের জন্য বিমানে ওঠার আগে কীভাবে প্রস্তুতি নিল বাংলাদেশ?
মেগা ইভেন্টের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন না করা অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল ভক্ত থেকে পণ্ডিতদের। তবে শেষ পর্যন্ত শান্ত বাহিনী ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও ব্যাটিংয়ের অস্বস্তি পুরো সিরিজ জুড়েই ছিল।
একটু পেছনে ফেরা যাক, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য এই ম্যাচটার ক্রেডিট বোলারদেরই দেওয়া যায়। টস জিতে সফরকারীদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ১২৪ রানের বেশি পুঁজি গড়তে দেয়নি স্বাগতিকরা। তাসকিন ও সাইফউদ্দিনদের দাপুটে বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে বড় পরীক্ষায় পড়তে হয়নি টিম টাইগার্সকে।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও শান্তর আমন্ত্রণে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় পুঁজি গড়তে পারেনি সফরকারীরা। ১৩৯ রানের মামুলি টার্গেট তাড়ায় ৬ উইকেটে জিতলেও স্বাগতিক ব্যাটারদের খরচ করতে হয়েছে ১৮ দশমিক ৩ ওভার। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর অনেকটা ঘাম জড়িয়েই জিততে হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে টস জিতে শুরুতে বোলিং বেছে নেওয়ায় সমালোচনা হচ্ছিল। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য টস ভাগ্য সহায় হয়নি টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে কে কত করলেন
ক্রিকেটার ইনিংস রান
তানজিদ তামিম ৫ ম্যাচে ১৬০ রান
নাজমুল শান্ত ৫ ম্যাচে ৮১ রান
লিটন দাস ৩ ম্যাচে ৩৬ রান
তাওহিদ হৃদয় ৫ ম্যাচে ১৪০ রান
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪ ম্যাচে ৮৯ রান
সাকিব আল হাসান ২ ম্যাচে ২২ রান
জাকের আলি ৪ ম্যাচে ৮৭ রান
চট্টগ্রামে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৬৫ রানের পুঁজি গড়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ১৫৬ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বোলারদের কল্যাণে ৯ রানের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। টানা তিন জয়ে সিরিজ জিতলেও লিটন, শান্তদের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা তুঙ্গে ছিল। ব্যাটিংয়ের অস্বস্তিটা আরও বেড়েছে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে।
মিরপুরে তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটির রান একশ ছাড়ায়। তবে ১০১ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর যেন ধস নামে। ১০১ থেকে ১৪৩। মাত্র ৪২ রানের ব্যবধানে ১০টি উইকেট হারায় স্বাগতিক ব্যাটাররা। বিশ্বকাপের আগে এমন ব্যাটিং নিশ্চিতভাবেই অশনি সংকেত। সর্বশেষ আজ সিরিজের শেষ ম্যাচেও ১০ ব্যাটার নিয়ে খেলতে নেমে ১৫৭ রানের বেশি পুঁজি গড়তে পারেননি শান্ত-সাকিবরা।
সিরিজে ৮ উইকেট নিয়ে পার্থক্য গড়ে দেওয়া তাসকিন আজ শেষ ম্যাচের একাদশে ছিলেন না। ইনজুরির শঙ্কায় বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে তাকে। এ ছাড়া আরেক পেসার তানজিম সাকিবকেও আজ রাখা হয়নি। তারা থাকলে ১৫৭ রানের পুঁজিটা ডিফেন্ড করা যেত কি না এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে বিশ্বকাপে চোখ রেখে খেলা সিরিজে জয় পরাজয় ছাড়াও প্রতিটা বিভাগে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে বোলিং ইউনিট বাদ দিলে ব্যাটিংয়ের অবস্থা নাজুক।
পাঁচ ইনিংসে ৪০ গড়ে ১৬০ রান নিয়ে সিরিজের টপ স্কোরার তানজিদ হাসান তামিম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তাওহিদ হৃদয়। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৪০ রান। এ ছাড়া বাকিদের অবস্থা যাচ্ছেতাই। একটা বেশ মজার তথ্য হচ্ছে, সদ্য সমাপ্ত সিরিজে বেস্ট স্ট্রাইকরেট জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির (১৬৩.৬৩)। এ তালিকার পরের দুটি জায়গাও সফরকারীদের দখলে।
বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ। এমন চেনা সিলেবাসেও ‘ঢাহা ফেইল’ বাংলাদেশের টপঅর্ডার। অবশ্য আসন্ন বিশ্বকাপের আগে পরীক্ষা নিরীক্ষার আর সময় নেই। ব্যাকফুটে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়েই বিশ্বকাপে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে হবে।