আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি জাকির আলীর। গত বছর এশিয়ান গেমসের ক্রিকেট ইভেন্টে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে তার দেশের হয়ে অভিষেক হয়। তবে অভিষেককে তিনি শুধু কলম-কাগজ দিয়েই মনে রাখবেন।

আজ সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তার 'আসল' অভিষেক। আজ থেকে ১০ বছর আগে যখন জাকিরের অভিষেক নিয়ে আলোচনা হয়, তখন কলম-কাগজ এশিয়ান গেমসের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারে, কিন্তু মানুষ আজ তার ইনিংস মনে রাখবে। ৩৪ বলে ৬৮ । ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ।

ইনিংসে মাত্র ৩ বল বাকি থাকতেই আউট হন তিনি। বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১০ রান ৩ বলে । হাতে ৪ উইকেট। জাকির ছয়টি ছক্কা ও চারটি চারের সাহায্যে এই কঠিন সহজ করে দেন। শুধু শেষ ধাপ বাকি। সেই সময়ে, তার সপ্তম ছয়ের পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট দীর্ঘ বল ছিল। বাংলাদেশ আর পারবে না। শেষ বলে যখন শেষ হয়েছে মাত্র ৩ রানে হেরেছে, ভক্তদের নিশ্চয়ই মনে হয়েছে জাকির থাকলে সেদিন সিলেট জিতত।

বাংলাদেশ দলে আজ জাকের জায়গা পাওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ বলছিলেন, এটা জাকেরের ‘হালাল’ অভিষেক। কারণ খুব সহজেই বোঝা যায়। এশিয়ান গেমস তো আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অংশ নয়। সেজন্য কারও কারও চোখে আজকের ম্যাচেই আসল অভিষেক হলো জাকেরের। আর কেন এই ইনিংসটি ভোলা কঠিন হবে—সেই ব্যাখ্যাও নিশ্চয়ই খুলে বলতে হবে না।

তবে যেটুকু না বললেই নয়—২০৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। টি–টোয়েন্টিতে দুই শ এর বেশি রান তাড়া করতে নেমে ৬৮ রানে ৪ উইকেট পড়েছে—এমন পরিস্থিতি থেকে সর্বশেষ বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানকে দেখেছেন দলকে জয়ের এত কাছে নিয়ে যেতে? স্মৃতির এই তালিকা আরও ছোট হয়ে আসবে যদি বলা হয়, ছয়ে নামা কারও কাছ থেকে এমন বিস্ফোরক কিন্তু অসম্ভবের পিছু ছোটা ইনিংস শেষ কবে দেখেছেন?

ভাবছেন ফিনিশার বুঝি মিলেই গেল! এখন সে প্রশ্ন নয়। আপাতত জাকেরকে আরেকটু দেখা যাব। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে নিজের চতুর্থ ইনিংসেই জাকের বাংলাদেশের হয়ে এই সংস্করণে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েছেন। ফিনিশার প্রশ্নের উত্তরে ইঙ্গিত আরেকটি আছে—১৪*, ২৪*, ০* ও ৬৮। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে জাকেরের এ পর্যন্ত ৪টি ইনিংস। হ্যাঁ, ম্যাচ শেষ করে আসার একটা সুর আছে জাকেরের ব্যাটে। এখন সেটাই পুরোপুরি বের হয়ে আসার অপেক্ষা।

জাকেরের জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষা ঘুচেছিল গত বিপিএলের পরেই ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে। কিন্তু মাঠে নামার সুযোগ পাননি। এবারের বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে ১৩ ম্যাচে ৯ ইনিংসে ব্যাট করে জাকের নট আউট ৭ ইনিংসে, ৮৯.৫ গড় ও ১৫১ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৭৯। জাকের এরপরও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবারের টি–টোয়েন্টিতে ডাক পাননি। আলিস ইসলাম চোটে পড়ায় ডাক পেয়েছিলেন এবং বিপিএলে দুর্দান্ত খেলার কারণেই আজ তাঁর মাঠে নামা। বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

জাকের রান করেছেন সেটা ভালো কথা। কিন্তু যে বিষয়টি সবচেয়ে নজর কেড়েছে, যেভাবে রান করেছেন। টি–টোয়েন্টিতে পুরোনো বল মেরে মাঠের বাইরে পাঠানো নতুন বলের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন। কিন্তু জাকেরের পুরোনো বল মারতেই বেশি ভালো লাগে। এখান থেকে তাঁর মানসিক শক্তির ব্যাপারটিও টের পাওয়া যায়। আর পুরোনো বল মারতে মাথার অবস্থান স্থির থেকে এক ডাউন সুইংয়ে ব্যাট চালানোর যে কৌশল—সেসব জাকের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই রপ্ত করে এসেছেন। শিখে আসা সেই ‘বিদ্যা’ই আজ টের পেল শ্রীলঙ্কা।

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন জাকেরকে দেওয়া প্রশংসাপত্রে বলেছেন, ‘(জাকের) আলী দলে এসে প্রচুর ইনটেন্ট দেখিয়েছে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জাকেরর ইনিংসটিও অসাধারণ ছিল। আশা করি পরের ম্যাচেও তারা অবদান রাখবেন।’