একটু হিসাবটা মেলানো যাক। একটি টুর্নামেন্টের আর্থিক লাভবানের পিছনে বেশ কিছু আর্থিক হিসেবনিকেশ থাকে। বাংলাদেশের কমপক্ষে ৯ কোটি টিভি দর্শক আইপিএলের হিসেবের বাইরে না। গত বছরগু'লোতে যে বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলগুলো টিভি স্বত্ব পেয়েছিলো আইপিএল এর, তাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেষ দুই বছরের বাংলাদেশে আইপিএল টিআরপি কমেছে ১২.৯ শতাংশ পর্যন্ত যার ফলে কমেছে বিজ্ঞাপন মুল্যও। বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিতভাবে চিন্তিত হবার কথা স্টার স্পোর্টস এর৷

কলকাতার প্রভাবশালী একজন সাংবাদিক স্বীকার করলেন ফোনে কথা বলবার সময়। কিন্তু বিশেষ কিছু কারনে নিজের নাম প্রকাশ করবেন না এমন স্বর্তে কথা বলেছেন আমা'দের সাথে। তিনি বলেন,

” সাকিব অবশ্যই অনেক গু'রুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার। কিন্তু কলকাতা আর পুরো আইপিএলের আগ্রহের পিছনে অন্য ব্যাপার আছে। সবকিছু প্রমান ছাড়া বলা ঠিক না। তবে আইপিএল এর নিলাম প্রক্রিয়া থেকে একাদশ সবকিছুর পিছনেই স্পন্সর'শিপ সহ অর্থের ব্যাপারটা দাদা অনেক বড়। এতো বড় বাজেটের টুর্নামেন্ট। এগুলো নিয়ে বলে লাভ নেই, আর্থিক ব্যাপার যখন আছে এগু'লো মেনে নিতেই হবে। “

প্রশ্নঃ তাহলে কি আপনি বলতে চাইছেন যে সাকিবকে নিয়ে কলকাতার আগ্রহের জায়গা যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন প্রচরনা এবং ক্যাম্পিংয়ে সেটা স্রেফ মার্কেটিং?

” দেখু'ন সাকিব তো নামী ক্রিকেটার। সাকিবকে নিয়ে ব্রান্ডিং বড় একটা সুযোগ। এটা সবাই করতে চাইবে। হায়দ্রাবাদও করেছে। ২০ কোটি মানুষের একটা বড়সড় দাম তো আছেই৷ তবে আমি এটা বলছি না যে সাকিব ম্যাচ পাবেনা, সাকিব হয়ত অনেক ম্যাচ খেলবে আবার না ও খেলতে পারে। তবে অর্থনৈতিক ব্যাপার যে জড়িত সেটা ঠিক “

কলকাতা নাইট রাইডার্স নিয়ে সাকিব আল হাসানের নিজের উচ্ছাস উদ্দীপনা অনেক বেশি, তিনি সেটি বারবার প্রকাশও করেছেন। সাকিবকে প্রথমবার কেনার পর থেকে সাকিবকে কলকাতা সবসময় ধরেও রেখেছিলো তিনবছর আগ পর্যন্ত। কিন্তু সাকিবকে সেভাবে একটি আসর ছাড়া বাকি কোনবারই সেভাবে নিয়মিত একাদশে বিবেচনা করেনি কলকাতা নাইট রাইডার্স। ম্যানেজমেন্ট এবং টিম কম্বিনেশন মেলাতে সেটি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।

এরপর কলকাতা সাকিবকে ছেড়ে দেয় এবং সেবার মুস্তাফিজকে ছেড়ে দিয়ে সাকিবকে দল ভেড়ায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। একইসাথে কলকাতার সেবারে মা'র্কেটিংয়ে বেশ ক্ষ'তির কথা তুলে ধরে ভারতের বেশ কয়েকটি গনমাধ্যম।

হায়দ্রাবাদ সাকিবকে ছেড়ে দেবার পর বিশ্বকাপে সাকিবের অভাবনীয় পারফরম্যান্স স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে সাকিবকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয় আইপিএল এর টিমগু'লো। যার কারনে চলতি বছরে আইপিএল শুরুর আগেই সাকিবকে নিয়ে রীতিমতো টানা হেঁচড়া হবে এমন সব মন্তব্য করে খোদ কিছু ভারতীয় গনমাধ্যম ও জাতীয় ক্রিকেটাররা৷

কিন্তু নিলামে দেখা গেলো উল্টো চিত্র। বরং সাকিবকে অনেক কম দামেই দলে ভেড়াতে পারে কলকাতা নাইট রাইডার্স৷ অথচ ভারতে নি'ষি'দ্ধ এক বাজির ওয়েবসাইটে সাকিবের দাম হবে কমপক্ষে ৮ কোটি রুপি বলে দেড় লক্ষের বেশি বাজি ধ’রা হয়৷ টাকার হিসাবটা বোধহয় না করলেও চলে তাইতো!

এরপর আসি কলকাতার হালচিত্রে। সাকিবকে নিয়ে খুব বেশিই উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে নাইট শিবিরে৷ যতটা সম্মান সাকিবের প্রাপ্য ততটাই তারা দেখাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে আরো বাকি ক্রিকেটাররা কোথায়? আন্দ্রে রাসেল,প্যাট কামিন্সদের যেন খুঁজে পাওয়া কষ্টকর অথচ তারা শতকরা শতভাগ ম্যাচ খেলবেন। রাসেল, কামিন্স আর মর'গানের জায়গা যদি নিশ্চিত হয় তবে আর বিদেশী কোঠায় সুযোগ থাকে একটি৷ যেখানে সাকিবের প্রতিপক্ষ বেন কাটিং, সুনীল নারায়ন।

সাকিবকে নিয়ে কলকাতা যদি ১০০% শিউর হয় তবে কি বাকিরা ম্যাচ পাবেননা! নাকি সাকিবকে নিয়ে কেকেআরের এতো আমোদ শুধুই মা'র্কেটিং কৌশল! সেই উত্তর পেতে কয়েকটা ম্যাচ অব্দি অ'পেক্ষা করতেই হবে৷ যদি এতো এতো প্রচারের পরও সাকিবকে নিয়মিত একাদশে দেখা না যায় তবে আপনি কি বলবেন? সে উত্তর আপনার কাছেই জানার থাকলো।

মুস্তাফিজুর রহমানের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা একই রকম। বরং সাকিবের তুলনায় মুস্তাফিজুর রহমানের ম্যাচ পাবার সম্ভাবনা আরো কম। তবে কি সাকিব-ফিজ আইপিএলের মা'র্কেটিং কৌশল মাত্র!!