২০১৮ সালের তাক লাগানো পাঁচ স্মার্টফোন
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম হলো অ্যান্ড্রয়েড। এটি নিঃসন্দেহে বর্তমান বাজারে মোবাইল শিল্পে আধিপত্য বিস্তার করছে। টেক জায়ান্ট অ্যাপলও কম যায় না। তাছাড়া বাকি সব স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও নিজেদের সেরাটা দিয়ে বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের চেষ্টা করছে। ২০১৭/২০১৮ সালে স্মার্টফোনের বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ ক্রমশই স্মার্টফোন ক্যামেরার দিকে ঝুঁকছে। প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনে ক্যামেরার ক্ষেত্রে এমন সব সুবিধা দেয়া হয়েছে যে, তা অনেকে সময় প্রফেশনাল ভিডিও ক্যামেরাকেও টক্কর দিচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে অ্যান্ড্রয়েড অথরিটির বিচারে সেরা পাঁচে স্যামসাং, আইফোন, এইচটিসি, গুগল পিক্সেলসহ হুয়াওয়ে কোম্পানির ফোন স্থান পেয়েছে।
১. স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৮: ক্যামেরার ক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের সর্বশেষ ফ্ল্যাগশীপ মোবাইলটি হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। এস পেন (ড্রয়িং পেন) সুবিধাসহ গ্যালাক্সি নোট সিরিজের সর্বশেষ সংস্করণ এটি। নোট ৮-ই স্যামসাংয়ের প্রথম ফোন যেটাতে প্রতিষ্ঠানটি সর্বপ্রথম ডুয়েল ক্যামেরা লেন্সের ব্যবহার শৃুরু করেছে। ফোনটির রেয়ার ক্যামেরায় দুটি ডুয়াল ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। ক্যামেরা দুটির একটির এ্যাপাচার ১.৭, এতে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৪ মাইক্রন সাইজের পিক্সেল। লেন্সটিতে ডাবল পিক্সেল অটো ফোকাস প্রযুুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। অপর ক্যামেরার লেন্সটিতেও ১২ মেগাপিক্সেলের সঙ্গে অ্যাপাচার ২.৪ ব্যবহার করা হয়েছে। যার পিক্সেল সাইজ ১ মাইক্রন। দুটি লেন্সের সমন্বয়ে নোট এইট ডে-লাইট কিংবা লো-লাইটে চমৎকার ছবি তুলতে সক্ষম। এছাড়াও ফোনটিতে ২-এক্স অপটিকাল জুুম সুবিধাসহ অপটিকাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেসন (ওআইএস) সুবিধা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফোনটি দিয়ে চার হাজার রেজুলেশনের ভিডিও ধারণ করা যায়। ক্যামেরায় রয়েছে স্যামসাংয়ের 'বুকেহ মুুড'। যা ব্যবহার করে সহজেই ছবির ব্যকগ্রাউন্ড ঘোলা (ব্লার) করা যাবে। মোটকথা একজন ক্যামেরাপ্রেমীর চাহিদা বেশ ভালোভাবেই পূরণে সক্ষম নোট এইট-এর রেয়ার ক্যামেরা। ফোনটিতে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন হিসেবে থাকছে ৭.১.১ (নূগ্যাট) এবং প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে শক্তিশালী স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ অক্টাকোর প্রসেসর। মোবাইলটিতে রয়েছে ৬.৩ ইঞ্চি সুপার অ্যামলেড ডিসপ্লে। র্যাম ৬ জিবি এবং রম ৬৪/১২৮/২৫৬ জিবি (তিনটি ক্যাটাগরিতে পাওয়া যাবে)। স্মার্টফোনটির ব্যাটারি ৩৩০০ অ্যাম্পিয়ার। বাংলাদেশের বাজারে ফোনটির মূল্য রাখা হয়েছে প্রায় ৯৭০০০ টাকা।
২. গুগল পিক্সেল ২ ও পিক্সেল ২ এক্স এল: স্মার্টফোনপ্রেমীদের সবসময় গুগলের প্রতি আলাদা আকর্ষণ থাকে। বরাবরের মত গুগলও ২০১৭ সালে তাদের সেরা দুই স্মার্টফোন পিক্সেল ২ এবং পিক্সেল ২ এক্স এল বাজারে রিলিজ করে। ফোন দুটির মধ্যে আয়তনগত পার্থক্য থাকলেও ক্যামেরা তৈরিতে একই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। গুগলের এই ফোনটিতে গুগল বিএসআই সেন্সর সমৃদ্ধ ১২.২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ব্যবহার করেছে, যার অ্যাপাচার ১.৮। ক্যামেরায় লেজার অটোফোকাস ও পিডিএফ অটোফোকাসের সমন্বয়ে ডাবল অটোফোকাস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ফোনটি দিয়ে খুব সহজেই সুন্দর ছবি তোলা যায়। এছাড়াও সেলফি প্রেমীদের জন্য পিক্সেল ফোনটিতে রয়েছে ২.৪ অ্যাপাচার বিশিষ্ট ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা। যা দিয়ে ভালোমানের ছবির পাশাপাশি ১০৮০ পিক্সেলের ভিডিও ধারণ করা সম্ভব। ফোনটিতে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন হিসেবে থাকছে লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ৮ (অরিও) এবং ব্যবহার করা হয়েছে শক্তিশালী স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ অক্টাকোর প্রসেসর। ফোনটির ডিসপ্লে ৬ ইঞ্চি (পিক্সেল ২ এক্স এল) বা ৫ ইঞ্চি (পিক্সেল ২) আইপিএস। যার র্যাম ৪ জিবি এবং রম ৬৪ / ১২৮ জিবি। ফোনটির ব্যাটারি ৩৩২০ (পিক্সেল ২ এক্স এল) এবং ২৭০০(পিক্সেল ২) অ্যাম্পিয়ার। দেশের বাজারে ফোনটির মূল্য প্রায় ৮৫ হাজার থেকে ৯১ হাজার টাকা।
৩. এইচটিসি ইউ ১১: এক সময় মোবাইলের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের তালিকায় উপরের দিকেই ছিল এইচটিসি। তবে নানাকারণে পিছিয়ে পড়ে এইচটিসি। ২০১৭ সাল থেকে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ যোগ করে আবারো ফ্রন্টলাইনে আসতে চাইছে এইচটিসি। বাজার পলিসির অংশ হিসেবে এইচটিসি সম্প্রতি উন্মোচন করে তাদের জনপ্রিয় ইউ সিরিজ। যার সর্বশেষ সংস্করণ হিসেবে ২০১৭ সালে রিলিজ হয় এইচটিসি ইউ ১১। চমৎকার নকশা, আপডেটেড হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যারের অপূর্ব মিশ্রণে এইচটিসি ইউ-১১ যে কারো নজর কাড়তে সক্ষম। ফোনটির ক্যামেরায় আনা হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। রেয়ার ক্যামেরায় ১.৪ মাইক্রন সাইজের বড় পিক্সেলের পাশাপাশি কম আলোতে নিখুঁত ছবি তোলার জন্য রয়েছে ১.৭ অ্যাপাচার সমৃদ্ধ ১২ মেগাপিক্সেল। এছাড়াও থাকছে ডাবল পিক্সেল অটোফোকাস, চার এক্সিস ওআইএস ও ফেস ডিটেকশনসহ আরো অনেক ফিচার। যা যেকোন পরিস্থিতিতেই চমৎকার ছবি তুলতে সক্ষম। এইচ টি সি ফ্যানদের জন্য খুশির খবর হলো- ডক্সওমার্ক অনুযায়ী এইচটিসিইউ-১১ বাজারের সেরা স্মার্টফোন ক্যামেরাগুলোর একটি। ফোনটিতে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন হিসেবে থাকছে ৭.১.১ (নূগ্যাট) এবং স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ অক্টাকোর প্রসেসর। অত্যাধুনিক এই স্মার্টফোনটির ডিসপ্লে ৫.৫ ইঞ্চি (আইপিএস)। র্যাম ৪/৬ জিবি এবং রম ১২৮/২৫৬ জিবি। ফোনটির ব্যাটারি ৩ হাজার অ্যাম্পিয়ার। বাংলাদেশের বাজারে ফোনটির দাম পড়বে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।
৪. অ্যাপল আইফোন-এক্স: হার্ডওয়্যারের ভালো ফলাফলের কারণে অ্যাপলের শুরু থেকে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বিশ্বজুড়ে অ্যাপলের হাই-হার্ড ফ্যানও আছেন অনেকে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাজারে আসে আলোচিত আইফোন এক্স মডেলের স্মার্টফোনটি। এই মোবাইলটির মাধ্যমে অ্যাপল প্রথম ডাবল রেয়ার ক্যামেরার জগতে প্রবেশ করে। আইফোন এক্স-এর রেয়ার পানেলে অ্যাপল ব্যবহার করেছে দুটি ১২ মেগাপিক্সেলের সেন্সর। যার একটি ১.৮ অ্যাপাচার বিশিষ্ট সনির বিখ্যাত এক্সমর সেন্সর। অপর ক্যামেরাতে ২.৪ অ্যাপাচার বিশিষ্ট ১২ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো লেন্স। ফলে চমৎকার ফটোগ্রাফি করতে আইফোনের জুড়ি নেই। এছাড়া ফোনটি দিয়ে ৪-কে ভিডিও রেকর্ডিং ছাড়াও ২-এক্স অপটিকাল জুম করার সুবিধা তো থাকছেই। ফোনটিতে আইওএস ভার্সন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ১১.১.১। ডিসপ্লেতে থাকছে- ৫.৮ ইঞ্চি অ্যামলেড ডিসপ্লে। ফোনটির র্যাম ৩ জিবি এবং রম ৬৪/২৫৬ জিবি (দুইটি ভ্যারিয়্যান্টে পাওয়া যাবে)। প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাপলের নিজস্ব উদ্ভাবিত বায়োনিক এ-১১ হেক্সা-কোর প্রসেসর। ফোনটির ব্যাটারি ২৭১৬ অ্যাম্পিয়ার। বাংলাদেশের বাজারে মোবাইলটির দাম রাখা হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা।
৫. হুয়াওয়ে মেট ১০/মেট ১০ প্রো: চাইনিজ স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাজারে বের করেছে তাদের সেরা দুই ফ্ল্যাগশীপ মোবাইল মেট টেন এবং মেট টেন প্রো। ফোন দুটির মধ্যে আয়তনগত পার্থক্য থাকলেও ফোনের ক্যামেরায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি একই রকম। মেট টেন-এর ক্যামেরা সেট আপে হুয়াওয়েকে সার্বিকভাবে সহায়তা করেছে বিশ্বখ্যাত ক্যামেরা প্রতিষ্ঠান লেইকা। প্রতিষ্ঠানটি তাদের এই ফোনের রেয়ার প্যানেলে দুটি ক্যামেরার ব্যবহার করেছে। যার একটি ১.৬ অ্যাপাচার সমৃদ্ধ ১২ মেগাপিক্সেলের সেন্সর এবং অপরটি ১.৬ অ্যাপাচারের ২০ মেগাপিক্সেলের মনোক্রোম সেন্সর। মনোক্রোম সেন্সর ব্যবহারের ফলে মেট-১০-এর ক্যামেরা দিয়ে ২-এক্স অপটিকাল জুম ছাড়াও ৪-কে ভিডিও রেকর্ডিং করা যায়। এছাড়াও লো লাইট কিংবা ডে লাইট উভয় ক্ষেত্রেই হুয়াওয়ে মেট টেন ক্যামেরার পারফরম্যান্স সব দিক দিয়ে সবার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। ফোনটিতে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন হিসেবে থাকছে লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ৮ (অরিও)। ফোনটিতে ৬ ইঞ্চি অ্যামলেড ডিসপ্লে (হুয়াওয়ে মেট ১০ প্রো) / ৫ ইঞ্চি আইপিএস ডিসপ্লে (হুুয়াওয়ে মেট ১০)। হুুয়াওয়ে ফোনদুটিতে ব্যবহার করেছে শক্তিশালী হাই-সিলিকন কিরিন ৯৭০ অক্টাকোর প্রসেসর। র্যাম ৪/৬ জিবি এবং রম ৬৪/১২৮ জিবি (দুইটি ক্যাটাগরিতে পাওয়া যাবে)। এই তালিকার ফোনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সক্ষমতার (৪ হাজার অ্যাম্পিয়ার) ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে ফোন দুটিতে। বাংলাদেশের বাজারে ফোনটির মূল্য রাখা হয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা।